আমার যে নিজস্ব একটা নাম আছে তা মনে হয় মানুষজন ভুলেই গেছে। আমি নিজেও আমার নাম ভুলতে বসেছিলাম। কারণ সবাই আমকে ডাকত ‘মটু’। মটু ডাকবেই বা না কেন— আমার যে ওজন। আমি থাকাতে হোষ্টেলের কোন উৎসবে বেঁচে যাওয়া খাবার নিয়ে কারো চিন্তা করতে হতো না। সবাই একস্বরে বলতো যে আমাদের মটু আছে না! সত্যিই তাই— আমি সেই বেঁচে যাওয়া খাবার স্বাচ্ছন্দে খাদকের মতো গপগপ করে গিলতাম। খাদকের মতো এমন করে গপাগপ করে গিলার ফলাফলও দেখতে পেলাম আমার শরীরে। আমার ওজন বেড়ে ১০৪ কেজিতে ঠেকল। একসময় শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়ার পাশাপাশি মানুষের কটুক্তিও সমহারে বাড়তে থাকল। অবশেষে ২০১৫ সাল। সিদ্ধান্ত নেই অনেক হয়েছে এবার আমার ওজনের লাগাম টানতেই হবে। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। ইন্টারনেট ঘেটে বিভিন্ন ধরনের ডায়েট ফলো করা শুরু করি। এসব ডায়েট করে ওজন ৫—৬ কেজি কমার পর আর কমতে চাইত না। সেই ৫—৬ কেজি কমানো ওজনও ধরে রাখতে পারিনি। ফলাফল যেই মটু সেই মটুই রয়ে গেলাম। এক সময় হতাশ হয়ে পড়ি। মনে হলো আমাকে দিয়ে হবে না। ওজন কমানোর আশাও ফিকে হয়ে আসে। তখনই আশার আলো দেখতে পাই পরিচিত এক ভাইয়ের ফেইসবুক স্ট্যাটাসে। যিনি ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টারের ডায়েট প্ল্যান মেনে ১১১ কেজি থেকে ৬৫ কেজিতে এসেছেন। উনাকে দেখে ভরসা পেলাম এবং আমার অনভিজ্ঞ কাজের ভুল বুঝতে পারলাম। মনে হলো আমিও পারব। এরই প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ২৫ জুলাই আমি ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টারে যাই। ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টারে এসে উনাদের আন্তরিক সেবায় আমি মুগ্ধ হয়ে যাই। সেদিন ১—১.৫ ঘন্টা শুধু আমার কাউন্সেলিং করেন। যা আমাকে সত্যিই অবাক করেছিল। উনারা আমার খাবারদাবার এর পাশাপাশি আমার লাইফস্টাইল পরিবর্তন করার প্রতিও জোর দেন।
উনাদের কাউন্সেলিং আমার মাঝে পুনরায় আশার আলো জাগিয়ে তোলে। ২ দিন পর আমাকে একটি প্ল্যান দেন যেখানে ডায়েট চার্টের পাশাপাশি কিছু ফ্রি—হ্যান্ড ব্যায়াম ছিল। উনারা আমাকে খুব যত্ন সহকারে ব্যায়ামগুলো শিখিয়ে দেন। আমি পুরোদমে শুরু থেকে সবকিছু মেনে চলা শুরু করি। কিন্তু ততদিনে আমার বন্ধু মহলে কানাঘুষা শুরু হয়ে যায়। তারা বলা শুরু করল আমি যে খাদক আমাকে দিয়ে হবে না। তাদের হাসাহাসিতে আমি দমে যায়নি। সারাদিনের প্ল্যান মোতাবেক সবকিছু করতে থাকি। ১৫ দিন পর যখন ফলো আপ দিতে যাই তখন নিজের পরিবর্তন দেখে আমি নিজেই খুশী হয়ে যায়। আবার দ্বিগুন উদ্যমে নেমে পড়ি। আমার ক্লাস বন্ধ থাকায় পার্কে গিয়ে এক্সারসাইজ করা শুরু করি। পার্কে অন্যান্যদের ব্যায়াম দেখে ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টারের এক্সারসাইজ গুলো করার পাশাপাশি সেগুলোও করতে থাকি। পরবতীর্ ফলোআপে গিয়ে উনাদেরকে সেগুলো দেখিয়ে নিতাম। আরো দ্রুত ওজন কমানোর জন্য নিজে নিজে ওয়েট লিফটিং করা শুরু করি এবং যা খাবার দিয়েছে তার থেকেও কম খেতে থাকি। কিছুদিন পর আমার বন্ধুরা আমাকে বলতে লাগল আমি নাকি কঁুজো হয়ে যাচ্ছি। ফলো আপে গিয়ে দেখি আমার উচ্চতা আধা ইঞ্চি কমে গিয়েছে। উনারা আমাকে জিজ্ঞেস করল আমি ওয়েট লিফটিং করেছি কিনা। আমি সত্যটি স্বীকার করলাম। উনারা আমাকে সুন্দর করে বুঝালেন, কম খেয়ে এভাবে ওজন কমালে কিছুদিন পর দ্বিগুণ পরিমাণে বাড়বে। এরপর থেকে আমি সব ঠিক ঠাক মতো ফলো করা শুরু করি। উনারাও আমাকে মাঝে মাঝে ফোন দিয়ে খেঁাজ খবর নেন এবং আমাকে উৎসাহ দেন। ২০১৬ সালের ২৭ নভেম্বর— কাঙ্খিত সেই দিন, অবশেষে আমি আমার অতিরিক্ত ৩২ কেজি ওজন কমিয়ে আদর্শ ওজন ৭২ কেজি তে এসেছি। কোন ধরণের সাপ্লিমেন্ট ও পার্শ¦ প্রতিক্রিয়া ছাড়াই আমি ওজন কমাতে পেরেছি। বন্ধু মহলে ততদিনে আমি মটু থেকে হিরো হিসেবে পরিচিতি পেয়েছি। কিন্তু কিছুদিন পর আমার পরীক্ষা শেষে আমি যখন চাকরি খুজছি তখন আমার লাইফস্টাইল ও খাবারের পরিবর্তনের কারণে কিছুটা ওজন বাড়লে আমি আবার ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টারে যাই। তখন ওনারা আমাকে আদর্শ ওজনে নিয়ে আসেন এবং সেটাকে কিভাবে ধরে রাখতে হবে তা ভালো মত শিখিয়ে দেন। ফলে ২০১৬ সাল থেকে এখন ২০১৮ সাল পর্যন্ত আমি আমার ওজন ধরে রাখতে পেরেছি। ওজন ২ কে.জি বাড়লে সেটা কিভাবে আবার কমিয়ে আদর্শ ওজনে আনা যায় তা এখন আমি জানি।
If you have any queries please contact us
Please fill out the below details if you wish to receive a confidential call from our client relations team.