আমি খেতে খুব ভালবাসি। আগেও খেতে ভালবাসতাম, এখনও ভালবাসি। আমার কাছে মনে হয় পৃথিবীতে জন্ম শুধু খাওয়ার জন্যই। ঢাকা শহরের কোথায় কোন রেস্টুরেন্ট আছে, কোন রেস্টুরেন্টের খাবার কেমন তা আমার নখদর্পনে। আমি রাত জেগে মুভি দেখতাম। তার সাথে সমানতালে খাওয়া দাওয়া চলতো। আমি প্রচুর ঘুরতে পছন্দ করি। বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় আমার পদচারণা ছিল। ঘুরতে যাওয়া মানেই আমি সে জায়গার লোকাল ফুডগুলো খাবই খাব। আমি ছোটবেলা থেকেই নাদুসনুদুস। কখনো আমাকে কেউ চিকন দেখেছে বলে আমার মনে পড়ে না। কিন্তু আরো খেয়ে খেয়ে আমার ওজন ১১১ কেজি হলো। একসময় আমার এই স্থূলতার জন্য পারিবারিক বিভিন্ন সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা দেয়। এমনকি প্রফেশনাল লাইফে অনেক সমস্যা দেখা দেয়। আমি অরৎঃড়ঁপয ঞবষবপড়সসঁহরপধঃরড়হ এ ঈঋঙ পদে কর্মরত আছি। আমি এনারজেটিক ফিল করতাম না। খুব বেশি অলসতা দেখা দিল আমার মাঝে। ঘুরতে গিয়েও খুব স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতাম না। আমাকে তখন অনেকে পরামর্শ দিল ওজন কমানোর। আমি ওজন কমনোর জন্য অনেকের শরণাপন্ন হলাম। তারা আমাকে বিভিন্ন ধরনের সাপ্লিমেন্ট দিলেন। কিন্তু আমার ওজন যেন কমতেই চাইছিল না। হঠাৎ একদিন ডায়েট কাইন্সেলিং সেন্টারের নাম শুনলাম। ভাবলাম গিয়েই দেখি না কি হয়। আমি ওখানে গিয়ে উনাদের বললাম খুব কঠিন ডায়েট দেন যেন আমি অল্পদিনের মধ্যে ওজন কমিয়ে ফেলতে পারি। কিন্তু উনারা আমাকে বুঝালেন যে খুব কঠিন ডায়েট দিয়ে রাতারাতি ওজন না কমিয়ে ব্যালেন্স ওয়েতে ওজন কমালে তা দীর্ঘস্থায়ী হবে। উনারা আমাকে বুঝিয়ে দিলেন যে কিভাবে লাইফস্টাইলের সাথে খাবারের সামঞ্জস্য রক্ষা করতে হবে। ২ দিন পর উনারা আমাকে কম ক্যালরিতে সুষম ডায়েট প্ল্যান করে দিলেন। সাথে কিছু ফ্রি—হ্যান্ড ব্যায়াম দিলেন। আমি তা নিষ্ঠার সাথে পালন করা শুরু করি। উনারা আমাকে যে ফ্রি—হ্যান্ড ব্যায়াম দিলেন আমি তা থেকে বেশি করতে থাকলাম। ফলো আপে যাওয়ার পর উনারা আমার আগ্রহ দেখে আমাকে উৎসাহিত করলেন। ১৫ দিনে আমার ওজন প্রায় ৫.৫—৬ কেজির মত কমেছে দেখে আমার উৎসাহ আরো বেড়ে গেল। ২ মাসে মোট ৪ বার আমার ডায়েট প্ল্যান পরিবর্তন করে দিলেন। রোজার মাস চলে এল। রোজায় কিভাবে খাব তার ডায়েট প্ল্যান দিলেন। আর বলে দিলেন আমি যেন রোজা রেখে কোনো ব্যায়াম না করি। তাই আমি রোজা ভাঙার পর ব্যায়াম করি। এতে আমার ওজন আরো কিছু কমলো। এভাবে মাত্র ৬ মাসে আমার ওজন ৪৬ কেজি কমাতে সক্ষম হয়েছি। এই পুরোটা সময় আমি যাতে দুর্বল না হয়ে পড়ি উনারা সে দিকে খেয়াল রেখেছেন। ফলোআপ ছাড়াও নিয়মিত আমাকে ফোন দিয়ে খোজখবর রেখেছেন।
ওজন কমার সাথে সাথে আমি আমার পারসোনাল ও প্রফেশনাল উভয়ক্ষেত্রে ডিপ্রেশন কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। এখন আমি আগের চেয়ে অনেক বেশি এনার্জেটিক। আমি এখনও ঘুরতে যাই। ঘুরতে গেলে আমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি এবং এখনও ঘুরতে গেলে আমি সেখানকার লোকাল ফুড খাই। কিন্তু এখন আমি জানি কিভাবে খাওয়ার পরে কি করলে আমার ওজন বাড়বে না। আমার এতটাই পরিবর্তন হয়েছে যে ৬ মাস পর যখন আমি আমাদের গ্রামে পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাই, তখন আমার নিজের চাচা আমাকে দেখে চিনতে পারেননি। চিনতে পারবেন—ই বা কিভাবে? ছোটবেলা থেকেই আমাকে কখনো ফিট দেখেননি। বরাবরই দেখেছেন আমি স্থূল। আমি এখন জানি কিভাবে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। তাই এখন আমি নিজেকে দেখে ভাবি যে অসম্ভব বলে সত্যিই কিছু নেই।
If you have any queries please contact us
Please fill out the below details if you wish to receive a confidential call from our client relations team.