নারী দিবস (পর্ব ৫)
শিশু জন্মের পর মা সন্তানকে নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকেন। বিশেষ করে সন্তানকে দুধ খাওয়ানো থেকে শুরু করে বাচ্চার ঠিকমত যত্ন নেয়া ও বাচ্চার কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা, তা নিয়ে। ঠিকমত দুধ পাচ্ছে কিনা এ নিয়েও অনেকেই দুঃশ্চিন্তায় থাকেন। এমনকি রাতের ঘুম বিসর্জন গেলেও। এতো কিছুর মাঝে সংসার তো রয়েছেই। এর পাশাপাশি যারা সংসার ছাড়াও বাইরে কাজ করছেন, তাদের কথা তো বলারই অপেক্ষা রাখে না। সবকিছু ঠিকমতো পরিচালনা করতে গিয়ে নারীর নিজের প্রতি খেয়াল রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় বেশিরভাগ স্তন্যদাত্রী মায়ের পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন দেখা যায়। ডিপ্রেশনের কারণে যে কোনো নারীর কাজের গতি মন্থর হয়ে যেতে পারে। এ অবস্থা দূর করতে প্রয়োজন উপযুক্ত কাউন্সেলিংয়ের। খুব সহজেই পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন থেকে একজন মাকে মুক্ত করা সম্ভব। পরিবারের প্রতিটি সদস্যের প্রসব পরবর্তী ডিপ্রেশন বিষয়টি জানা প্রয়োজন। নতুন মায়েদের পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন কাটাতে কাউন্সেলিং প্রয়োজন।
আজ একজনের কথা না বললেই নয়। তিনি ইউনিভারসিটির লেকচারার। তার একজন কলিগের কাছ থেকে আমাদের সেন্টার সম্পর্কে জেনে আসেন। তিনি এসেছিলেন, যখন তার সন্তানের বয়স মাত্র ৮ মাস। চাকুরিজীবি হওয়ায় মার্তৃত্বকালীন ছুটিও তখন শেষ। ছুটি শেষে যথারীতি কাজে যোগ দিতে হয়েছে। ঐ সময়ে তার দেহের অতিরিক্ত ওজন বেড়ে খুবই বেসামাল অবস্থা। ওজনের পাশাপাশি আরো কিছু স্বাস্থ্যসমস্যাও দেখা দেয়। অনিয়মিত খাবার গ্রহণে এসিডিটি, কোষ্ঠকাঠিন্য, পা ব্যথা, সিঁড়িতে উঠা-নামা করলে হাঁপিয়ে ওঠা ইত্যাদি আরো অনেককিছু।
আমরা লক্ষ্য করি, অসম্ভব রকমের ডিপ্রেশনে ভুগছেন তিনি। কাউন্সেলিং থেকে জানা গেলো ডিপ্রেশনের নানান কারণ। তিনি দিন দিন হাঁপিয়ে উঠছিলেন সবকিছু সামাল দিতে। যেমন- তিনি জানতেন ২ বছর পর্যন্ত বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। কিন্তু চাইলেও বাচ্চাকে কীভাবে দুধ খাওয়াবেন তা বুঝতে পারছিলেন না। এছাড়া অল্প সময়ে ঘরের রান্না-বান্না, খাওয়া-দাওয়া, বাচ্চাকে সময় দেয়া, নিজেকে সময় দেয়া, স্বামীকে সময় দেয়া এ সবকিছু নিয়ে দুঃশ্চিন্তা ক্রমশ বাড়ছিলো। উনি কোনো কিছুই ঠিকমতো করতে পারছিলেন না ডিপ্রেশন বেড়ে যাওয়ার কারণে। যাই হোক প্রথম দিন উনার সঙ্গে কাউন্সেলিং হলো প্রায় ১ ঘন্টা। এর ২ দিন পর ওনাকে লাইফস্টাইল ও ফুডহ্যাবিট বুঝে সম্পূর্ণ দিনের একটি প্ল্যান দেয়া হলো। ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত প্রতিটি বিষয় কীভাবে কী করবেন তা প্ল্যানে দেয়া হলো। যেমন কীভাবে বুকের দুধ সংরক্ষণ করা যায়, কীভাবে বাচ্চাকে খাওয়াতে হবে, বাচ্চাকে নিয়েই কীভাবে নিজের ওজন কমানোর ব্যায়াম করবেন, কম সময়ে রান্নার উপায় ইত্যাদি। তিনি ভয় পাচ্ছিলেন ওজন কমাতে গিয়ে আবার বুকের দুধ কমে না যায়। যদিও বাচ্চার তখন বুকের দুধের পাশাপাশি অন্য পরিপুরক খাবার চলছিলো। কাউন্সেলিংয়ের সময়ই তাকে আশ্বস্ত করা হয়েছিলো, ওজন কমাতে বুকের দুধের কোনো সমস্যা হবে না। আমাদের দেয়া এই ফুডহ্যাবিট ও লাইফস্টাইল প্ল্যান উনি বেশ যত্নের সঙ্গেই অনুসরণ করেন। উনার জন্য সম্পূর্ণ কার্যকর ছিলো এই প্ল্যান। মাত্র ২ মাসেই তিনি এর কার্যকরি ফলাফল পেলেন এবং ২ মাসের মধ্যে তিনি সাড়ে ১০ কেজি ওজন কমাতে সক্ষম হলেন। শুধু তা-ই নয়, উনার দেহের দৃশ্যমান পরিবর্তন আশপাশ সবাই বুঝতে পারছিলো।
উনার ভাষায়,“নিজেকে অনেক হালকা মনে হচ্ছে। এনার্জি লেবেল অনেক বেড়ে গেছে। অন্যান্য শারীরিক সমস্যাগুলো নেই বললেই চলে। ঘর ও ঘরের বাইরে, পরিবার পরিজন সবকিছু নিয়ে বাচ্চাকে সামাল দিতে কোনো সমস্যা নেই। বলতে দ্বিধা নেই, বাচ্চা হবার পর মায়েদের যে ডিপ্রেশন হয় তা থেকে কীভাবে বের বের হয়ে মাতৃত্বকে উপভোগ করা যায় তা আমি কাউন্সেলিংয়েই জানতে পেরেছি”।
প্রসব পরবর্তী ডিপ্রেশন কাটিয়ে উঠতে একজন মাকে সাহায্য করা প্রয়োজন। এতে খুব সহজেই কিছুদিনের মধ্যে তিনি আবার পূর্বের ন্যায় একজন কর্মঠ নারী হিসেবে সবকিছু করতে সক্ষম হবেন।
সৈয়দা শারমিন আক্তার
প্রিন্সিপাল নিউট্রিশনিস্ট
ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টার
If you have any queries please contact us
Please fill out the below details if you wish to receive a confidential call from our client relations team.