নারী জীবনের পরিবর্তনের মধ্যে আরেকটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন মেনোপজ। অর্থাৎ যখন ঋতুচক্রের সমাপ্তি ঘটে। সাধারণত ৪৫ বছরের পর থেকে যে কোনো সময়ে হতে পারে। মেনোপজ একটি প্রাকৃতিক জৈবিক প্রক্রিয়া। এসময় কিছু কিছু লক্ষণ দেহে দেখা দিয়ে থাকে। মেনোপজ (পেরিমেনোপজ) হওয়ার মাস বা বছরগুলিতে কিছু কিছু লক্ষণ যেমন: অনিয়মিত পিরিয়ড, যোনির শুষ্কতা, হঠাৎ গরম হঠাৎ শীতল অনুভূত হওয়া, রাতে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, ঘুমের সমস্যা, মেজাজ পরিবর্তন হওয়া, ওজন বৃদ্ধি এবং বিপাকক্রিয়ার ধীরগতি, চুল পড়ে যাওয়া, ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। তবে এধরণের লক্ষণ সবার ক্ষেত্রে একই রকম প্রকাশ পায় না।
জটিলতা
মেনোপজের কারণে নারীদের বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্যসমস্যা দেখা দেয়। যেমন: ঋতুচক্র চলাকালে নারীদের হৃদরোগের সম্ভাবনা অনেক কম থাকে। কিন্তু মেনোপজের পর ইস্ট্রোজন হরমোনের মাত্রা কমে যাওয়ায় কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। হৃদপিণ্ডের সুস্থতায় সুষম খাদ্য গ্রহণ ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন। পাশাপাশি কোলেস্টেরল বা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখাও জরুরি।
মেনোপজের কয়েকবছরের মধ্যে অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি বেড়ে গেলে দ্রুত হাড়ের ঘনত্ব কমে যেতে পারে। যার জন্য পোস্টমেনোপজে বেশিরভাগ নারীর মেরুদণ্ড, নিতম্ব এবং কব্জি ভাঙার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। সেজন্য উপযুক্ত সুষম খাদ্য বিশেষ করে ক্যালসিয়াম, জিংক ও ভিটামিন ডি-যুক্ত খাবারের বেশি প্রয়োজন।
কখনো কখনো মূত্রনালীগুলোর টিস্যুর স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয়। তখন অনিয়ন্ত্রিত ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার মতো সমস্যাগুলো বেশি দেখা দেয়। মাঝে মাঝে মুত্রনালীর বিভিন্ন সংক্রমনও হতে পারে।
পোস্টমেনোপজে অনেক বেশি ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলেই উপরে উল্লেখিত সমস্যাগুলো অনেকাংশেই কমানো সম্ভব।
ডায়েটারী গাইডলাইন
মেনোপজের সময়, পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম পেতে প্রতিদিন দুগ্ধজাত খাবার, গাঢ় সবুজ শাক-সবজি, সামুদ্রিক মাছ খাওয়া প্রয়োজন। দেহে ক্যালসিয়াম শোষণে ভিটামিন ডি-র প্রয়োজন। তা-ই প্রতিদিন অন্তত ১০-১৫ মিনিট সরাসরি সূর্যের আলো দেহের জন্য ভালো। ভিটামিন বি কমপ্লেক্সেরও প্রয়োজন নার্ভের কার্যকারিতা ভালো রাখার জন্য।
এসময় প্রচুর আয়রণ প্রয়োজন। প্রতিদিন অন্তত ৪ মিলিগ্রাম। সেজন্য চর্বিছাড়া লাল মাংস, চামড়া ছাড়া হাঁসের মাংস, মাছ, ডিম, শাক সবুজ শাকসবজি, বাদাম খাওয়া প্রয়োজন। আয়রণ শোষনে ভিটামিন সি-র দরকার। প্রতিদিন ফল, ফলের জুস, পেয়ারা, কমলা, লেবু ইত্যাদির মাধ্যমে ভিটামিন সি খাওয়া প্রয়োজন।
সুস্থতার জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত খাদ্যআঁশের। দিনে অন্তত ২১-৩০ গ্রাম আঁশ খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সঙ্গে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ ও রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে থাকে। প্রতিদিনের খাবারে আঁশযুক্ত রুটি, পাস্তা, তাজা ফল এবং শাকসব্জি রাখতে হবে। কমপক্ষে ২ থেকে আড়াই কাপ সবজি আর ৩-৪ পরিবেশন ফল রাখা ভালো।
খাবারে সীমাবদ্ধতা
সুষম খাদ্য পরিকল্পনায় ২৫-৩০% তেল-চর্বি রাখলেও মেনোপজে ৭% এর বেশি সম্পৃক্ত চর্বি রাখা যাবে না। অর্থাৎ খাবারে তেল-চর্বিতে সীমাবদ্ধতা থাকতে হবে। ভাজাপোড়া খাবার, মাখন, চিজজাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন। এর পাশাপাশি চিনি এবং লবণের ব্যবহারও কমিয়ে দিতে হবে।
প্রকৃতির নিয়ম-তো মানতেই হয়। সঠিক পুষ্টি ও নিয়মমতো ব্যায়াম খুব সহজেই শরীরকে সুস্থ রাখতে পারে। মেনোপজে নিজেকে সুস্থ রাখতে একজন অভিজ্ঞ পুষ্টিবিদের শরণাপন্ন হোন। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিজের তাগিদে নিজেকে সুস্থ রাখুন।
সৈয়দা শারমিন আক্তার
প্রিন্সিপাল নিউট্রিশনিস্ট
ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টার
If you have any queries please contact us
Please fill out the below details if you wish to receive a confidential call from our client relations team.