শিশু জন্মের পর প্রথম খাবারই হলো মায়ের দুধ। IYCF (Infant and young child feeding) এর প্রথম শর্ত, শিশু জন্মের ১ ঘন্টার মধ্যে যেন নবজাতককে মায়ের বুকে দেয়া হয়। কারণ মায়ের বুকের প্রথম দুধ বা শালদুধ হচ্ছে শিশুর জন্য প্রথম প্রতিষেধক টিকা। মায়ের দুধ দ্রুত আসার জন্য যত তাড়াতাড়ি নবজাতক মায়ের বুকে আসবে তত তাড়াতাড়ি দুধও আসবে। দ্রুত দুধ আসার জন্য গর্ভাবস্থা থেকেই মায়ের কিছু কিছু কাজ করা প্রয়োজন। গর্ভের সময় যখন ৬ মাস পূর্ণ হয়ে যায়, তখন থেকে মায়ের স্তনের আকার-আকৃতির পরিবর্তন হতে থাকে। সেসময় নিপলের যত্ন মা-কেই নিতে হবে। কখনো কখনো গর্ভবতী নারীর ফ্ল্যাট নিপল থাকতে পারে। বিশেষ প্রক্রিয়ায় ম্যাসাজ করলে খুব সহজে তখন ঠিক করা যায়। যার জন্য শিশু জন্মের পর নবজাতকের মুখে দেয়ার মতো তৈরি করা যায়। যত দ্রুত শিশুকে টানতে দেয়া হবে, তত খুব সহজেই দুধ চলে আসবে।
অনেকে শিশু জন্মের পর নবজাতককে মধু খাওয়ানোর কথা চিন্তা করে থাকেন। মায়ের দুধ শিশুর জন্য প্রথম এবং সর্বোত্তম খাবার। যা কোন মধু বা অন্য কোনো কিছুতেই সম্ভব নয়। মায়ের দুধ প্রথম খাবার হিসেবে এতোটাই পুষ্টি উপাদানে ভরপুর থাকে যে, ৬ মাস (১৮০ দিন) পর্যন্ত শিশুর পানিরও প্রয়োজন হয় না। শুধু তা-ই নয়, ৬ মাস পর থেকে পরিপুরক খাবারের পাশাপাশি শিশুর বয়স ২ বছর পর্যন্ত মায়ের দুধ খাওয়ানো মা এবং শিশুর জন্য খুবই উপকারী। এতে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, শিশু পুষ্ট থাকে, মায়ের সঙ্গে বন্ধন বৃদ্ধি পায়, এমন কি ভবিষ্যতে মায়ের ব্রেস্ট বা সার্ভিক্যাল ক্যান্সারেরও ঝুঁকে কমে যায়। পৃথিবীতে যতোগুলো ক্যান্সার রয়েছে তা পুরুষ ও মহিলাদের প্রায় একই রকম হয়ে থাকে। মহিলাদের বিশেষ করে মেনোপজের পর এ ২ ধরণের ক্যান্সারের হার বেশি।
মায়ের দুধ শিশুর অধিকার। পরিবার পরিজন থেকে শুরু করে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্র, বিপণীবিতান বা যে কোনো প্রতিষ্ঠানে শিশুকে যেনো একজন মা দুধ খাওয়াতে পারেন, সে ব্যবস্থা রাখা উচিত। মায়ের দুধ খাওয়ানোর সুযোগ তৈরিতে পরিবারের ভূমিকাও অনেক। যেমন ঘরে কোনো অতিথি আসলে যেনো মা-কে দুধ খাওয়ানো অবস্থায় উঠে যেতে না হয়। রান্নার সময় দুধ খাওয়াচ্ছে বলে কিছু পুড়ে যাচ্ছে এমনটা না হওয়া। কোনো দাওয়াতে গেলে শিশুকে দুধ খাওয়ানোর সুযোগ করে দেয়া। শিশুর পেট ব্যথা বা কান্নার কারণে মা টক অথবা ঝাল খাবার খেয়েছে বলে মা-কে দোষী না করা। কোভিড পজেটিভ মায়ের হলে শিশুরও পজেটিভ হবে এমনটা না ভাবা, ইত্যাদি। কারণ মায়ের দুধের মাধ্যমে মায়ের দেহের কোনো ক্ষতিকর উপাদান শিশুর মধ্যে আসে না। এটা গবেষণায় প্রমাণিত। তবে কোভিড পজেটিভ মা-কে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিশুকে দুধ খাওয়াতে হবে। মায়ের ঠান্ডা লাগলে শিশুরও লাগবে এমন কোনো কথা নেই। তবে মা-কে হাঁচি-কাশিতে সাবধান থাকা প্রয়োজন।
© সৈয়দা শারমিন আক্তার
প্রধান পুষ্টিবিদ, ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টার।
If you have any queries please contact us
Please fill out the below details if you wish to receive a confidential call from our client relations team.