শেষ পর্ব
ব্রেস্ট ক্যান্সার বিশ্ব জুড়েই একটি আতংকের নাম। অনেকটা ভয়াল আকার ধারণ করেছে। সমীক্ষায় বলে, প্রতি ৮ জনে ১ জন নারী জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। জেনেটিক কারণের মতো কিছু রিস্ক ফ্যাক্টর আছে যা পরিবর্তন করা সম্ভব নাও হতে পারে। কিন্তু সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও লাইফ স্টাইল পরিবর্তনের মাধ্যমে অবশ্যই ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
খাদ্যাভ্যাস যেমন হওয়া প্রয়োজন:
ভিটামিনযুক্ত খাবার গ্রহণ করুন: ভিটামিন ও খনিজ লবণ ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। বিশেষ করে ভিটামিন এ, ডি, ই-যুক্ত খাবারগুলো খুবই প্রয়োজন। এ উপাদানগুলো পেতে প্রতিদিন ফল, রঙ্গিন সবজি যেমন গাজর-টমেটো-পাকা পেঁপে-বিট ইত্যাদি অর্থাৎ যেগুলো রান্না ছাড়া খাওয়া যায়, সামুদ্রিক মাছ, আখরোট, সূর্যমুখির বীচি, সয়াবিন, ডিমের কুসুম ইত্যাদি খাবারগুলো প্রতিদিনের খাবারে অন্তর্ভূক্ত রাখা প্রয়োজন। ভিটামিন ডি পেতে প্রতিদিন অন্তত ১০-১৫ মিনিট সরাসরি সহনীয় পর্যায়ের সূর্যের আলো নিজের ত্বকে লাগানো প্রয়োজন।
পানিয় হিসেবে গ্রীনটি পান করুন: প্রসেসড ছাড়া যে গ্রীন টি তা পানির পরিবর্তিত পানিয় হিসেবে পান করার চেষ্টা করুন। গ্রীনটিতে ইজিসিজি (এপিগ্যালোক্যাটেচিন-৩-গ্যালেট) নামক উপাদান থাকে যা ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকে বন্ধ করতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন গ্রিনটি পান করুন। বানানোর পদ্ধতি: ছাকনিতে গ্রীন টি-র আস্ত পাতা ১ চা চামচ রেখে দিন। উপর থেকে ফুটন্ত গরম পানি ঢেলে দিন। এ গ্রীন টি গরম ঠান্ডা দু-ভাবে পান করা যায়। গরম খেতে চাইলে মধু-লেবু-আদা দিয়ে চায়ের মতোও খাওয়া যায়।
ক্যান্সার প্রতিরোধী খাবার গ্রহণ করুন: প্রতিদিন আঁশযুক্ত খাবার খাদ্য তালিকায় রাখুন। প্রতিদিন প্রায় ৩০ গ্রাম খাদ্যআঁশ গ্রহণ ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমাতে পারে। ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনাও ৫০% পর্যন্ত কমে যেতে পারে। আঁশযুক্ত খাবারের মধ্যে রয়েছে মটরশুঁটি, তাজা দেশি মৌসুমি ফল, আস্ত শস্য এবং ফ্ল্যাভনয়েড, ক্রুসিফেরাস ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট(ব্রোকলি, ফুলকপি, বাঁধাকপি) ও ক্যারোটিনয়েড (রঙিন শাক-সবজি)সমৃদ্ধ সবজি ইত্যাদি। রান্নায় সচরাচর পেঁয়াজ, রসুন, পেঁয়াজ পাতা ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। এগুলো ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ফ্রি র্যাডিকেলকে নিরপেক্ষ করে এবং ক্যান্সার কোষের বিস্তার রোধ করে। সালাদ হিসেবে এইধরনের সবজি কাঁচা খাওয়ার উপকারিতা বেশি। সয়াবিন ও সয়াপণ্য যেমন- টফু ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। সাদা চিনি বা রিফাইন্ড চিনি ক্যান্সার সেল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তা-ই খাবারে চিনির পরিমাণ কমিয়ে দিন। চিনির পরিবর্তে খেজুর, খুরমা, কিশমিশ, মধু, তালের গুড় মাঝে মাঝে খাওয়া যেতে পারে।
স্বাস্থ্যকর চর্বি গ্রহণ করুন
সম্পৃক্ত চর্বি এবং ট্র্যান্সফ্যাটিএসিড ব্রেস্ট ক্যান্সারের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তাই স্বাভাবিকভাবে খাবারে অতিরিক্ত তেল-চর্বি বর্জন করা প্রয়োজন। যতটুকু খাওয়া যাবে তার পুরোটুকুই অসম্পৃক্ত চর্বি যেমন- ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটিএসিডযুক্ত চর্বি গ্রহণ করা প্রয়োজন। যেমন- নদী বা সামুদ্রিক মাছের তেল গ্রহণ করুন। তাছাড়া বিভিন্ন জাতের বাদাম থেকেও স্বাস্থ্যকর চর্বি পাওয়া যায়। প্রতিদিনের স্ন্যাক্স হিসেবে বাদাম এবং সপ্তাহে অন্তত ২ দিন সামুদ্রিক মাছ রাখুন।
ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে উপকারী কিছু তথ্য জেনে রাখা ভালো
- বাঁশি, পঁচা, গাজানো, প্রসেসড, স্ট্রিটফুড, ফাস্টফুড জাতিয় খাবার গ্রহন থেকে যতটুকু সম্ভব বিরত থাকুন।
- কৃত্রিম খাবার গ্রহণ না খেয়ে নিয়মিত স্বাভাবিক ও তাজা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
- ঘরে-বাইরে রাসায়নিক উপাদান সমৃদ্ধ পরিষ্কারক, কীটনাশক ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।
- প্রতিদিনকার সংরক্ষণের জন্য প্লাস্টিকের সামগ্রিতে খাদ্য ও পানি সংরক্ষণ না করে কাঁচ কিংবা মাটির পাত্রে সংরক্ষণ করুন।
- বিভিন্ন রকম কৃত্রিম বাণিজ্যিক বিউটিকেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
- ২০-৩৯ বছরের নারীদের প্রতি ৩ বছর পর পর স্তনের ডাক্তারি পরীক্ষা করানোর চেষ্টা করুন।
- ৪০ ও তার অধিক বয়সের নারীদের প্রতিবছর স্তনের ডাক্তারি পরীক্ষার পাশাপাশি প্রয়োজন হলে মেমোগ্রাম করানোর ব্যবস্থা নিন।
- লাইফস্টাইলে অতিরিক্ত আরামদায়ক অবস্থায় না থেকে অবশ্যই হাঁটাচলা, হালকা ব্যায়াম, ঘরোয়া কাজ, বাইরের কাজ, বাগানের যত্ন ইত্যাদি করার চেষ্টা করুন।
- সবসময় পজেটিভ থাকার চেষ্টা করুন। ডিপ্রেশনকে কখনো নিজের ভেতর স্থান দেবেন না।
এভাবে নিজেদের পরিচালিত করতে পারলে অবশ্যই ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিহত করা সম্ভব।
কপিরাইট
সৈয়দা শারমিন আক্তার
প্রধান পুষ্টিবিদ, ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টার
If you have any queries please contact us
Please fill out the below details if you wish to receive a confidential call from our client relations team.