ক্রিয়েটিনিন একটি নাইট্রোজেন ঘটিত বর্জ্র যা বিপাকের ফলে মাসল থেকে তৈরি হয়। উপকারী কার্যক্রম না থাকায় ইউরিনের মাধ্যমে শরীর থেকে বেড়িয়ে যায়। আরজেনিন, গ্লাইসিন ও মিথিওনিন এমাইনো এসিড সংশ্লেষনে লিভার, অগ্নাশয়ে ক্রিয়েটিনিন তৈরি হয়। ক্রিয়েটিনিন ব্রেইন এবং অন্যান্য অর্গানে ফসফো ক্রিয়েটিনিনরুপে রক্তে প্রবাহিত হয়। যা ATP হিসেবে কাজ করে। সাধারণত গ্লোমেরিউলাসের মাধ্যমে দেহ থেকে প্রায় সম্পূর্ণ বের হয়ে যায়। কিডনী থেকে পুনঃশোষনে আবার রক্তে আসে না।
স্বাভাবিক মাত্রা: ছেলেদের ০.৭-১.৪ মিলিগ্রাম/ডিএল এবং মেয়েদের ০.৪-১.২ মিলিগ্রাম/ডিএল।
যে যে কারণে ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যেতে পারে-
অনেক কারণেই রক্তে ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যেতে পারে। তার মধ্যে-
- Urinary tract block হলে
- কোনো কারণে কিডনী ক্ষতিগ্রস্থ বা ফেইলইওর হলে, ইনফেকশন থাকলে, রক্তের ফ্লো কমে গেলে
- ডিহাইড্রেশন হলে
- মাংসপেশীতে কোনো ক্ষতি হলে অর্থাৎ কোনো কারণে মাসল ফাইবার ব্রেকডাউন হলে
- অনেক সময় গর্ভাবস্থায় একলাম্পসিয়া বা প্রি-একলাম্পসিয়া হলে পরবর্তীতে ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যেতে পারে।
- খাদ্যাভ্যাস থেকেও ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যেতে পারে। যেমন: অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ, অতিরিক্ত মাংস খেলে, নেফ্রোটিক সিনড্রমে, ডায়াবেটিক নেফ্রপ্যাথি, রেনাল ফেইলওর এও ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যেতে পারে।
- কোনো কারণে GFR কমে গেলেও প্লাজমায় ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যেতে পারে।
যেসব লক্ষণ ক্রিয়েটিনিন বেড়ে গেলে দেখা যায়
পায়ে পানি আসা, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যেতে পারে, দূর্বলতা, ভ্রান্তি, বমি বমি ভাব বা অরুচি, ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস, ইরেগুরার হার্ট রেট, বুকে ব্যথাও হতে পারে।
ক্রিয়েটিনিন কমাতে খাদ্যাভ্যাস
- ফসফরাস সমৃদ্ধ খাবার কমিয়ে দিন, যেমন: বিভিন্ন জাতের শিম, হোলগ্রেইন, ড্রাই ফল ও সবজি, চকলেট, ডার্ক চকলেট, মাংস, পোলট্রি, দুধ, চিজ, মাছ ইত্যাদি খাবার থেকে কমিয়ে দিন। ফসফরাস ও ক্যালসিয়াম বাইন্ড দিয়ে তৈরি খাবার অথবা মেডিসিন বর্জন করুন।
- দুধ, বাদাম বর্জন করুন। তবে রাইস মিল্ক খেতে পারেন।
- পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার বর্জন করুন, যেমন: কলা, কমলা, টমেটো, বাদাম, বিভিন্ন শিম, পেঁপে, দুধ ইত্যাদি।
- শাক-সবজি রান্নার আগে ফুটন্ত গরম পানিতে ৫ মিনিট চুবিয়ে পানি ফেলে দিয়ে স্বাভাবিক রান্না করুন। সব একসঙ্গে মেখে বসিয়ে রান্না করুন। নামানো আগে সামান্য অলিভ অয়েল বা অন্য কোনো তেল দিয়ে নাড়াচাড়া করে নামিয়ে নিন।
- সোডিয়াম নিয়ন্ত্রণে টেবিল সল্ট, ক্যান্ড ফুড, ফাস্ট ফুড, ক্যান্ড স্যুপ, আঁচার ইত্যাদি বর্জন করুন।
- প্রোটিনের পরিমাণ নির্দিষ্ট করুন। যেমন ০.৩-০.৫/কেজি অর্থাৎ ৭-৮ আউন্স অথবা ২৪ থেকে ২৫ গ্রাম। ক্রিয়েটিনিনের মাত্রার উপর কম-বেশি হতে পারে।
- নির্ধারিত মাত্রায় পানি পান করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ এখানে মেনে চলুন।
- বেরিজাত ফল পরিমাণে কিছুটা বেশি খেতে পারেন। লাল আপেল, লাল ও কালো আঙুর, বরই, সামান্য আনারশ ছাড়া অন্য কোনো ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
সর্বোপরি রোগ হওয়ার আগে সাবধান হোন, হওয়ার পরে না। আমাদের প্রত্যেকের উচিত নিজেদের অর্গানগুলোর যত্ন নেয়া। কিডনী আমাদের দেহের ছাকন যন্ত্র। এর যত্নে প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। ইউরিণের চাপ হলে চেপে রাখবেন না। মূল খাবার খাওয়ার পর পর চা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। অতিরিক্ত চা ও ধুমপান থেকে দূরে থাকুন। সুষম খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্থ হোন। প্রতিদিন দম চর্চা ও হালকা ব্যায়াম করুন।
লিখেছেন
সৈয়দা শারমিন আক্তার
প্রধান পুষ্টিবিদ ও প্রতিষ্ঠাতা
ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টার
If you have any queries please contact us
Please fill out the below details if you wish to receive a confidential call from our client relations team.