১ম পর্ব
আগে বলা হতো যার হয় যক্ষা, তার না-ই রক্ষা। বর্তমানে আর এভাবে কেউ বলে না। চিকিৎসার মাধ্যমে খুব সহজেই যক্ষা রোগ থেকে নিজে রক্ষা পাওয়া এবং অন্যকেও রক্ষা করা যায়। প্রয়োজন বিষয়গুলো নিয়ে জানা এবং সেগুলো অন্যকে জানানো।
আমরা জানি, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম। তার অর্থ রোগের চিকিৎসার চেয়ে রোগ না হওয়াটাই বেশি জরুরি।
চাইলেই টিবি প্রতিরোধ করা যায়। তা-ই আগে জানতে হবে টিবি কি? যক্ষ্মা বা Tuberculosis নামক রোগের সংক্ষিপ্ত রূপ "টিবি"। টিবি বাতাসের মাধ্যমে একজন থেকে আরেকজনে ছড়াতে পারে। টিবি রোগে আক্রান্ত কেউ যখন কাশি, কথা বলে, হাসে, গান গায় বা হাঁচি দেয় তখন টিবি জীবাণু বাতাসের মধ্য দিয়ে আরেকজনের ফুসফুস বা গলা যেতে পারে। টিবি রোগে আক্রান্ত অসুস্থ ব্যক্তির কাছাকাছি যে কেউ টিবি জীবাণু শ্বাসের মাধ্যমে তাদের ফুসফুসে নিতে পারে। টিবি জীবাণু অসুস্থ না করেও শরীরে বাস করতে পারে। একে সুপ্ত টিবি সংক্রমণ বলা হয়। অর্থাৎ শরীরে শুধুমাত্র নিষ্ক্রিয় বা ঘুমন্ত টিবি জীবাণু রয়েছে ধরা হয়। নিষ্ক্রিয় বা ঘুমন্ত টিবি জীবাণু অন্য কারো দেহে যেতে পারে না। তবে হেলাফেলার কোনো কারণ নেই। যেকোনো মুহুর্তে এই জীবাণুগুলি জেগে উঠতে পারে বা শরীরে সংখ্যাবৃদ্ধির মাধ্যমে সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। এ অবস্থায় টিবি রোগে আক্রান্ত বোঝায়। এই জীবাণু সাধারণত ফুসফুসে আক্রমণ করে। শরীরের অন্যান্য অংশে আক্রমণ করতে পারে, যেমন, কিডনি, মস্তিষ্ক বা মেরুদণ্ড। টিবি জীবানু সক্রিয় হলেই অসুস্থ করে তুলতে পারে। এ অবস্থায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রতিদিন যাদের সাথে সময় কাটান তাদের কাছে জীবাণু ছড়াতে পারে।
টিবি বা যক্ষা জীবাণু সনাক্তের উপায়
যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত কারো আশেপাশে থাকলে তবে পরীক্ষার জন্য ডাক্তার বা স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে যাওয়া প্রয়োজন। টিবি সংক্রমণ সনাক্ত করতে সাহায্য করার জন্য দুটি পরীক্ষা ব্যবহার করা হয়: একটি টিবি ত্বক পরীক্ষা বা টিবি রক্ত পরীক্ষা। ত্বকের পরীক্ষাটি বেশিরভাগ ব্যবহৃত হয়। ত্বকের নিচে টিউবারকুলিন নামক কিছু পরীক্ষার উপাদান রাখার জন্য একটি ছোট সুই ব্যবহার করা হয়। 2-3 দিনের মধ্যে যদি তারমধ্যে কোনো গ্রোথ দেখা যায় তাহলে টিবি রোগ সনাক্ত হয়। কিছু ক্ষেত্রে, টিবি সংক্রমণ পরীক্ষা করার জন্য একটি টিবি রক্ত পরীক্ষা করা হয়। এই রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা হয় একজন ব্যক্তির ইমিউন সিস্টেম টিবি সৃষ্টিকারী জীবাণুর প্রতি প্রতিক্রিয়াশীল কিনা। তাছাড়াও আরো কিছু পরীক্ষা দিয়ে টিবি সনাক্ত করা হয়। যেমন: বুকের এক্স-রে এবং কফ পরীক্ষা।
টিবি হলে যা করা উচিত
সুপ্ত টিবি সংক্রমণ থাকলে পরবর্তীতে টিবি রোগ না হতে কিছু মেডিকেশনের প্রয়োজন হতে পারে। যা ডাক্তার প্রেসক্রাইব করবেন। সুপ্ত টিবি সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য এক বা একাধিক ওষুধ ব্যবহার করা হয়। ডাক্তার যেভাবে বলেন সেভাবেই আপনার ওষুধ গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ দীর্ঘমেয়াদে ওষুধ খেয়েও টিবি রোগের চিকিৎসা করা যায়। কারো যদি যক্ষ্মা রোগ থাকে, তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে যেভাবে নির্দেশনা এবং যে কয়দিনের জন্য মেডিসন দিয়েছেন তা সম্পূর্ণ করা হয়েছে কিনা। কারণ যতদিন মেয়াদে ওষুধ প্রদান করা হবে, তা পূরণ না করলে আবার অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। ওষুধগুলি সঠিকভাবে গ্রহণ না করলে জীবাণুগুলি তখনও জীবিত রয়ে যায়। যা পরবর্তীতে চিকিৎসা করা কঠিন হয়ে যেতে পারে। কারো শরীরে যক্ষ্মা রোগ থাকলে সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত করতে ছয় মাস থেকে ১ বছরও লাগতে পারে। টিভি জীবানূ Mycobacterium tuberculosis (MTB) একটি ব্যাকটেরিয়া। যা ওষুধ ছাড়া মেরে ফেলা সম্ভব হয় না।
ঝুঁকিতে রয়েছেন যারা
বিশেষ করে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম রয়েছে, অর্থাৎ যাদের এইচআইভি সংক্রমণ (এইডস সৃষ্টিকারী ভাইরাস); যারা সম্প্রতি টিবিতে আক্রান্ত হয়েছেন (গত দুই বছরে); যারা অবৈধ ওষুধ ইনজেকশন করে; শিশু-কিশোর এবং ছোট শিশু; বৃদ্ধ মানুষ; অতীতে যাদের যক্ষ্মার জন্য সঠিকভাবে চিকিৎসা করা হয়নি; এবং যাদের ডায়াবেটিস, কোনো কোনো ক্যান্সার, এবং অতিরিক্ত কম ওজনের হলে সেক্ষেত্রে টিবি সংক্রণের সম্ভাবনা থাকে। এই ব্যাক্তিদের শরীর দুর্বল থাকে। তাই তাদের পক্ষে টিবি জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব হয় না। তা-ই যারা টিবি জীবানূ বহন করছেন তাদের পরিবার এবং বন্ধুদের টিবি থেকে রক্ষা করতে নিয়মিত টিবি ওষুধ সেবন করুন! এখন টিবি নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। নিয়মিত ওষুধ সেবনে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া সম্ভব।
লিখেছেন
সৈয়দা শারমিন আক্তার
প্রধান পুষ্টিবিদ ও প্রতিষ্ঠাতা
ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টার
If you have any queries please contact us
Please fill out the below details if you wish to receive a confidential call from our client relations team.