যক্ষা একটি সংক্রামক রোগ। সঠিক পুষ্টি যক্ষা চিকিৎসা ত্বরান্বিত হতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, উপযুক্ত পুষ্টি রোগ প্রতিরোধের পাশাপাশি দেহকে সুস্থ অনাক্রম্যতা অবস্থায় রাখতে পারে। যক্ষা সাধারণত ফুসফুসকে প্রভাবিত করলেও শরীরের অন্য অংশেও বিস্তার করতে পারে। সক্রিয় টিবি-র লক্ষণের মধ্যে ৩ সপ্তাহের বেশি কাশি হওয়া, কখনো রক্তযুক্ত কফ, জ্বর, রাতে অতিরিক্ত ঘামানো এবং ওজন মাত্রাতিরিক্ত হ্রাস পেতে থাকা, ক্লন্তিবোধ হওয়া, দূর্বলতা হয়ে থাকে।
অপুষ্টি বা অতিরিক্ত জনসমাগম যক্ষার বিস্তার বাড়াতে পারে। যক্ষা রোগীদের ক্ষুধা হ্রাস, পুষ্টির ম্যালাবশোরপশন, মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট ম্যালাবশোরপশন হয়ে পরিবর্তিত বিপাক ক্রিয়া নষ্ট করে। প্রোটিন-শক্তির অপুষ্টি এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের ঘাটতি উভয়ই যক্ষা রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। সঠিক পুষ্টির অভাব সক্রিয় যক্ষা আরও খারাপ অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে। তাই শরীরকে যক্ষার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রস্তুত রাখতে সঠিকভাবে খাওয়া প্রয়োজন।
খাবারের ধরণ যেমন রাখা প্রয়োজন
যক্ষার জীবানূর বিরুদ্ধে লড়াই করতে খাদ্যের ভূমিকা অনেক।
* এ রোগে অনেকবেশি মাংসপেশীর ক্ষয় হয়। যা পূরণ করতে উচ্চ জৈবমূল্যের প্রোটিনের প্রয়োজন। খাবারে প্রোটিনের ঘাটতি যক্ষা রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার সক্ষমতা হারায়। দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার, চর্বিহীন মাংস, ডাল, মটরশুটি দিয়ে খাবারে প্রায় দুইতৃতীয়াংশ রাখা প্রয়োজন।
* রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে প্রতিদিন রঙিন ফল এবং শাকসবজি থেকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গ্রহণ করতে হবে।
* এনিমিয়া প্রতিরোধে বা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখা জরুরি। দিনে অন্তত দু-বার গাঢ় সবুজ শাক-সবজির অন্তর্ভুক্তি আয়রণের মাত্রা ঠিক রাখবে।
* অন্ত্রকে সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত খাদ্যআঁশ প্রয়োজন। খাদ্যআঁশের চাহিদা পূরণে গোটা শস্য, ডাল এবং অঙ্কুরিত ছোলা গ্রহণ করা প্রয়োজন। খাদ্যআঁশ অন্ত্রকে সুস্থ রাখে এবং দেহে উৎপন্ন টক্সিক উপাদান ও খারাপ চর্বি দূর করে।
* মাখন বা মার্জারিনের পরিবর্তে অলিভ অয়েল, তিলের তেল, সূর্যমুখী তেলের মতো অসম্পৃক্ত স্বাস্থ্যকর চর্বি খাবার বেছে নেয়া দরকার।
* যেকোনো ধরণের ধূমপান বা অ্যালকোহল সেবন চিকিৎসার জটিলতা এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের মধ্যে জিংক খুবই প্রয়োজনীয় উপাদান। জিঙ্কের পর্যাপ্ত গ্রহণে প্রদাহের সময় ফ্রি র্যাডিক্যাল মেমব্রেনের ক্ষতি কমিয়ে দেয়। খাদ্যতালিকায় জিংক সমৃদ্ধ খাবার হিসেবে বাদাম, মটরশুটি, মাছ, চর্বিহীন মাংস, মাশরুম, পালং শাক অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
ভিটামিন এ যক্ষা রোগে ইমিউনোকম্পিটেন্ট হিসেবে ভূমিকা রাখে। ম্যাক্রোফেজে ভাইরাল ব্যাসিলির সংখ্যাবৃদ্ধিকে বাধা দেয় ভিটামিন এ। টিবি-র অ্যান্টিবডি প্রতিক্রিয়ার জন্য অপরিহার্য ভিটামিন এ, লাল এবং কমলা রঙের ফল এবং শাকসবজিতে বর্তমান। প্রতিদিনের খাবারে ভিটামিন এ যুক্ত ফল ও সবজি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
ভিটামিন ডি ম্যাক্রোফেজগুলির কার্যকারিতায় ভূমিকা পালন করে এবং যক্ষা রোগে হোস্ট প্রতিরোধেও কাজ করে। ভিটামিন ডি ডিম, সামুদ্রিক মাছে বর্তমান।
গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান সেলেনিয়ামের রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। মাইকোব্যাকটেরিয়া ক্লিয়ারেন্সে সেলেনিয়াম গুরুত্বপূর্ণ। বাদাম, বিভিন্ন বীজ, রসুনে পর্যাপ্ত সেলেনিয়াম রয়েছে।
আয়রনের অভাবে সৃষ্ট অ্যানিমিয়ায় যক্ষা রোগের মতো রোগের সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পায়। খাবারে আয়রণের শোষণ বাড়াতে এক টুকরো লেবু সহ সবুজ শাক-সবজি খাওয়া প্রয়োজন।
চিকিৎসা সহজ করতে খাদ্য ও পুষ্টি অপরিহার্য। সেজন্য যেকোনো রোগে খাবারের নির্বাচন অভিজ্ঞ পুষ্টিবিদের পরামর্শে নিয়ে নিজেও সুস্থ থাকুন, অন্যকেও সুস্থ রাখতে সাহায্য করুন।
লিখেছেন
সৈয়দা শারমিন আক্তার
প্রধান পুষ্টিবিদ ও প্রতিষ্ঠাতা
ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টার
If you have any queries please contact us
Please fill out the below details if you wish to receive a confidential call from our client relations team.