অটিজম নিয়ে কিছু কথা-
অটিজম আসলে কি?
অটিজম কোনো পুষ্টিহিনতা নয়। এটা মস্তিস্কের বিকাশজনিত একটি সমস্যা- যার সূত্রপাত মায়ের গর্ভ থেকেই। শিশু মায়ের গর্ভে থাকাকালীন ৮ সপ্তাহ থেকে ১৬ সপ্তাহ সময়কাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। সব গর্ভবতী মা’কে এসময় অত্যন্ত সর্তকতার সাথে খাবার গ্রহণ করা উচিত। কোনোভাবে যদি এসময় মার্কারি জাতীয় খাবার যেমন- সি-ফিস, সি-প্রোডাক্ট, স্টার ফ্রুট বেশি খাওয়া হয় তাহলে পরবর্তিতে গর্ভস্থ্য শিশুর বিভিন্ন ধরণের মানসিক সমস্যা হতে দেখা যায়। যদিও অটিজমের কারণ আজও অজানা। অটিজম মূলত ব্রেণের একটা অবস্থা যেখানে শিশুদের মধ্যে সামাজিক আচার আচরণ, যোগাযোগ ও বাচন ভঙ্গির সমস্যা লক্ষ্য করা যায়। শিশু জন্মের ৩ বছরের মধ্যে এর প্রকাশ ঘটে। তাই শিশুদের বয়স অর্থাৎ জন্মের ১৮ মাস থেকে ৩৬ মাস বয়সের মধ্যে যদি ব্যবস্থা নেয়া যায় তাহলে যথোপযুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা, পুষ্টি ব্যবস্থাপনা এমনকি প্রশিক্ষিত অটিজম থেরাপিস্টের মাধ্যমে থেরাপি প্রদানের ফলে স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো যেতে পারে। শুধু তাই নয়, যদি পরবর্তিতেও প্রকাশ পায়, সেক্ষেত্রে সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় আর মা-বাবা ও পরিবারের চেষ্টার পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে ৮০% স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে।
অটিজম ও খাদ্য-পুষ্টি
অপুষ্টির জন্য অটিজম হয় না। প্রকাশ পাওয়ার পর থেকে গ্লুটিন ও কেজিনযুক্ত খাবার পরিহার, রক্তের শর্করার ভারসাম্য রক্ষা, ভিটামিন ও মিনারেলসের ঘাটতি পূরন, থাইরয়েডের কার্যকারীতা বৃদ্ধির মাধ্যমে অটিজম শিশুর অতি চঞ্চলতা, আক্রমনাত্মক আচরণ, মনোযোগ স্বল্পতা, চোখের যোগাযোগহীনতা, বিকৃত অঙ্গভঙ্গি ও অন্যান্য উপসর্গের তীব্রতা কমিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
অটিজমের সমস্যা সমাধানে খাবারের গুরুত্ব
১। গ্লুটিন ও কেজিনযুক্ত খাবার বর্জন করতে হবে- অটিজম শিশুদের খাদ্যে গ্লুটিন (গম, যব, বার্লি, রাই, ইস্ট ইত্যাদি) ও কেজিন (দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার) বর্জন করতে হবে। কারণ গ্লুটেন ও কেজিনযুক্ত খাবার অটিজম শিশুদের ত্রুটিপূর্ণ পাচন, শোষণ ও বিপাক ঘটায়, ফলে শিশুদের মধ্যে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। সেজন্য খাদ্য তালিকা থেকে গ্লুটেন ও কেজিনযুক্ত খাবার ধীরে ধীরে সরিয়ে ফেলার মাধ্যমে অতি অস্থিরতার পরিমাণ কমানো যায়।
২। অটিজম শিশুদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অস্বাভাবিক দেখা যায় অর্থাৎ গ্লুকোজের মাত্রা ক্রমাগত বাড়তে থাকে। এতে শিশুদের মধ্যে একাগ্রতা, হাইপারএ্যাকটিভিটি বা অস্থিরতার মাত্রা বৃদ্ধি পায়। তাই অটিজম শিশুদের খাবারে সরাসরি চিনি বা মিষ্টি না দেয়াই ভালো।
৩। থায়রক্সিন হরমোনের নিঃসরণ কম থাকে বেশিরভাগ অটিস্টিক শিশুদের হাইপোথায়রয়েডিজম দেখা দেয়। মানসিক অক্ষমতা, কথায় অস্পষ্টতা ও স্নায়ুবিক দূর্বলতা এই কারণেই দেখা যায়। তাই থায়রয়েড হরমোন তৈরির জন্য সামুদ্রিক মাছ, আয়োডিনযুক্ত লবণ খাওয়ালে অটিজম শিশুদের মানসিক, বুদ্ধিবৃত্তি ও স্নায়ুবিক উন্নয়ন ঘটানো যায়।
৪। অটিস্টিক শিশুদের জন্য বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, শিশু খাদ্যে যদি ভিটামিন এ (উৎস: মায়ের বুকের দুধ, কডলিভার অয়েল, ছোট মাছ, গাজর, পাকা পেঁপে, মিষ্টি কুমড়া, টমেটো, কলিজা, ডিম, পালংশাক, পাকা আম ইত্যাদি) খাওয়ানো হয় তাহলে শিশুদের দৃষ্টিশক্তির বৃদ্ধির পাশাপাশি চোখ রেখে কথা বলার প্রবণতা বাড়বে। পাশাপাশি ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি ও ম্যাগনেসিয়াম দিলে শিশুর ব্রেণের কার্যক্ষমতা বাড়বে।
৫। যেসব খাবার বেশি দেয়া প্রয়োজন-
দেশি বিভিন্ন ধরনের মৌসুমী শাক ও সবজি, দেশি যে কোন মৌসুমী ফল ও ঘরে বানানো চিনি ছাড়া ফ্রেশ জুস, আলুবোখারা ইত্যাদি।
প্রোটিনের জন্য নদী ও সাগরের মাছ, ডিম, বিভিন্ন জাতের মাংস, বিভিন্ন ধরনের বাদাম, আখরোট, বিভিন্ন ধরনের সীম ও সীমের বিচি, বিভিন্ন ধরনের ডাল।
দুধের কেজিনের বিকল্প হিসাবে- সয়াদুধ, অ্যালমন্ড বাটার বা অ্যালমন্ড মিল্ক অথবা অন্যান্য বাদামের তৈরি দুধ ইত্যাদি।
চিনি বা মিষ্টি কিছুর পরিবর্তে খুরমা, কিশমিস দেয়া যাবে। প্রাকৃতিকভাবে তৈরি মধু মাঝে মাঝে দেয়া যাবে।
৬। যেসব খাবার একেবারেই দেয়ার প্রয়োজন নেই-
চিনি, জাংক ফুড, চকোলেট, চিপস, বাণিজ্যিক ভাবে তৈরি জুস, কোমল পানিয়, ফাস্ট ফুড, ফ্রোজেন ফুড, প্রসেসড খাবার, প্রসেসড মাংস, পাউরুটি, বেক করা খাবার, বিভিন্ন ধরনের সিরিয়াল, কুকিস, পিজা, বিভিন্ন ধরনের ক্রেকার, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, পনির, আইসক্রিম, দধি ইত্যাদি।
সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় খাবারের পাশাপাশি বাকি ২০% পর্যাপ্ত যত্ন ও সময় দিলে অটিস্টিক শিশুও স্বাভাবিক অবস্থায় কর্মক্ষম হতে পারে।
সৈয়দা শারমিন আক্তার
প্রধান পুষ্টিবিদ, ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টার
If you have any queries please contact us
Please fill out the below details if you wish to receive a confidential call from our client relations team.