লিভার বা যকৃত মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর মধ্যে একটি। বড় অর্গান। সাইজে প্রায় ফুটবলের সমান। সৃষ্টিকর্তার অপার সৃষ্টি স্বাভাবিক আঘাত থেকে দূরে রাখতে পাঁজরের হাড়ের নীচের ডান অংশে লিভার অবস্থিত। দেহের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ লিভার করে থাকে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলো হলো-
- খাদ্যের রাসায়নিক পরিবর্তেনের মাধ্যমে পুষ্টিতে পরিবর্তন করা- যা আমাদের শারীর সুস্থ থাকতে প্রয়োজন।
- খাবার থেকে পুষ্টি সঞ্চয় করা-এ কারণে লিভারকে স্টোর হাউজও বলা হয়।
- রক্তের বর্জ্র উপাদান দেহ থেকে নিঃসরণ করা-যা পায়খানা ও প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেয়।
- বিভিন্ন ঔষধ, অ্যালকোহল ভেঙ্গে ফেলে।
- বিভিন্ন এনজাইম এবং পিত্তরস উৎপাদন করে যা খাদ্যদ্রব্য হজমে সাহায্য করে।
- রোগ প্রতিরোধের জন্য শরীরকে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ভূমিকা রাখে।
লিভার যেকোনো অসুবিধায় বা সমস্যায় নিজেকে পুনর্গঠন করতে সক্ষম। তা সত্ত্বেয় লিভারের সমস্যা দিন দিন অনেক প্রকট হচ্ছে। আজকাল ফুডহ্যাবিট এবং লাইফস্টাইলের পরিবর্তনে সুস্থ থাকাও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। নিজেকে সুস্থ রাখতে দেহের অর্গানগুলোর যত্ন নেয়া খুবই জরুরি।
লিভারের সুস্থতায় করনীয়
- স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা। অতিরিক্ত ওজনে লিভারে ফ্যাট জমে গিয়ে ফ্যাটি লিভার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। যা লিভারের রোগের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল রূপগুলির মধ্যে একটি।
- সবসময় সুষম খাবার খাওয়া। উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার, স্যাচুরেটেড ফ্যাট, রিফাইন্ড কার্ব অর্থাৎ সাদা রুটি, সাদা ভাত, রেগুলার পাস্তা এবং চিনি এড়িয়ে চলুন।
- কাঁচা বা কম রান্না করা শেলফিশ বর্জন করুন।
- প্রতিদিনের খাবারে উচ্চ খাদ্যআঁশযুক্ত খাবার হিসেবে তাজা মৌসুমি দেশি ফল ও সবজি, হোলগ্রেইন শস্য নির্বাচন করুন। লিভারের জন্য উপকারী গাঢ় সবুজ শাক-সবজি যেমন পালং শাক, পালং শাক এবং কমলা ও লাল রঙের ফল ও সবজি যেমন কমলা, বীট, গাজর খান। ডিপ-ফ্রাই খাবার বর্জন করুন।
- কম চর্বিযুক্ত মাংস, কম ননিযুক্ত দুধ খাওয়া ভালো। অসম্পৃক্ত চর্বির উৎস হিসেবে বাদাম, বিভিন্ন বীজ এবং মাছ খাওয়ার চেষ্টা করুন।
- মানুষের সুস্থতার অপরিহার্য উপাদান পানি। পানি সমতা বজায় রাখতে কমপক্ষে বর্তমান আবহাওয়ায় ১০-১২ গ্লাস পানি, জুস, স্যুপ খাওয়া প্রয়োজন।
- প্রতিদিন অন্তত ২০-৩০ মিনিট নিয়মিত ব্যায়াম বা হাঁটুন। এটি জ্বালানির জন্য ট্রাইগ্লিসারাইড ব্যবহার করে, ফলে লিভারে চর্বি জমতে বাঁধা প্রদান করে।
- যে কোনো ধরণে টক্সিন এড়িয়ে চলুন। কারণ টক্সিন লিভারের কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। প্রতিনিয়ত দেহে জমে যাওয়া বিভিন্ন টক্সিন উপাদান নিসরণে দম চর্চা করা, আদা জ্বাল দেয়া পানি খাওয়া, লেবু পানি পান করা উচিত।
- কীটনাশক, অ্যারোসল বা রাসায়নিক পদার্থগুলোর সাথে সরাসরি যোগাযোগ কমিয়ে দিন। যেমন অ্যারোসল ব্যবহার করলে খেয়াল করুন যেনো সেখানে বায়ু চলাচলের সুবিধা থাকে। পাশাপাশি মাস্ক ব্যবহার করুন।
- ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকুন।
- অবৈধ ওষুধের মধ্যে মারিজুয়ানা, কোকেন, হেরোইন, হ্যালুসিনোজেন, ইনহেল্যান্ট টাইপ থেকে একেবারে বিরত থাকুন।
- দূষিত বা অনিরাপদ সূঁচ এড়িয়ে চলুন।
- ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি আইটেম শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন। যেমন রেজার, টুথব্রাশ, আন্ডার গার্মেন্টস ইত্যাদি।
- বাথরুম ব্যবহারের পর সবসময় হাত ভালো করে ধুয়ে নিন। এমনকি বাচ্চা বড়দের ডায়াপার পরিবর্তন করে দেয়ার পরও হাত ধুয়ে নিন। এছাড়া খাবার তৈরি বা খাওয়ার আগে ভালো করে হাত ধুয়ে নিন।
- ওষুধ খাওয়ায় মনেযোগী হন। অতিরিক্ত ভিটামিন বা মিনারেলসযুক্ত সাপ্লিমেন্ট খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- সর্বোপরি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং পর্যাপ্ত বিশ্রামের জন্য রাতের ঘুম খুব জরুরি।
ভাল পুষ্টি এবং একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা এই কঠোর পরিশ্রমী অঙ্গকে সুস্থতার দিকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।
লিখেছেন
সৈয়দা শারমিন আক্তার
প্রধান পুষ্টিবিদ, ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টার
If you have any queries please contact us
Please fill out the below details if you wish to receive a confidential call from our client relations team.