হজ্জ, বছরের একটি বিশেষ সময়। এসময় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা এবং খাদ্য ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে থাকে। এমন এক জায়গায় অবস্থান করতে হয় যেখানে নিজের বাড়ি-ঘর বা কর্মক্ষেত্রের মতো সুবিধাগুলো পাওয়া যায় না। এর সঙ্গে আছে আবার শারীরিক বিভিন্ন স্বাস্থ্যসমস্যা। হজ্জ সাধারণত ২০-৪০ দিনের একটি বিশেষ সময় নির্ধারিত থাকে। বেশ কিছু কার্যক্রম এ সময়ের মধ্যে করতে হয়। নিজেদের খাবারের ব্যবস্থা বলতে গেলে সবসময় নিজেদের নিয়ন্ত্রণে খুব একটি থাকে না। শুধু তা-ই নয়, সেখানে যে ধরণের খাবারের ব্যবস্থা থাকে, সেখান থেকেই বেশিরভাগ খেতে হয়। সম্পূর্ণ হজ্জ পালনে অনেকবেশি পরিশ্রম করার প্রয়োজন হয়। সেজন্য শারীরিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে নিজেদের সুস্থ রাখা খুব জরুরি।
উচ্চকোলেস্টেরল ও উচ্চরক্তচাপে যা করণীয়
অনিয়ন্ত্রিত উচ্চরক্তচাপ থাকলে মাথায় যেনো বেশি রোদ না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন। তাওয়াফের সময় অথবা আরাফাতের ময়দানে ছায়া দিয়ে চলার চেষ্টা করুন। নিজের কাছে থাকা ছোটো ব্যাগে রাখুন কম সোডিয়ামযুক্ত ফল-সবজি যেমন খেজুর, ছোটো আপেল, কলা, কমলা, গাজর, বাদাম ইত্যাদি। এর পাশাপাশি প্রেশার নিয়ন্ত্রণের ওষুধ, ছোটো বোতলে জমজমের পানি ও ছোটো ছাতা রাখার চেষ্টা করুন। ওখানকার খাবার ব্যবস্থায় মাংস কম খাওয়ার চেষ্টা করুন। সবজি ও সালাদ বেশি রাখলে উপকার পাওয়া যাবে। ব্যবস্থা না থাকলে নিজে গাজর-শসা-লেবু কিনে রাখুন।
ওজন বেশি থাকলে করণীয়
হজ্জে নির্ধারিত খাবার ব্যবস্থায় মাংসের আধিক্য থাকে। নির্ধারিত খাবার খেতে হলে সারাদিনে কমপক্ষে প্রতিদিন ৩ বার বিশেষ করে ফজর-আসর-রাতের খাওয়ার পর তওয়াফ করার চেষ্টা করুন। পাশাপাশি উপরে উল্লিখিত নিজের কাছে রাখা খাবারগুলো বিশেষ করে বাদাম, খেজুর, গাজর, আপেল খাওয়ার চেষ্টা করুন। হজ্জ পালনে পরিশ্রম বেশি। সুস্থ দেহে হজ্জ পালনের চেষ্টা করুন।
এসিডিটির সমস্যায় করণীয়
অনেকেরই এসিডিটির সমস্যা থাকতে পারে। নির্ধারিত সময়ে নির্ধারিত খাবার খাওয়া এসিডিটি থাকলে অনেক সময় স্বাস্থ্যসমস্যা বাড়াতে পারে। এসিডিটির মেডিসিন সবসময় খাওয়া সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। নিজের কাছে রাখা খাবারগুলো অন্তত ২ ঘন্টা অন্তর অল্প অল্প করে খেয়ে নেয়া ভালো। যে খাবারই খাওয়া হোক না কেনো খাবার ভালো করে চিবিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করুন। অতিরিক্ত পেট ভরে খাওয়ার প্রয়োজন নেই। জমজমের পানি সর্বোত্র বিদ্যমান। খাওয়ার পর পর পানি না খেয়ে কিছুক্ষণ পর অর্থাৎ অন্তত আধা ঘন্টা পর খাওয়া ভালো।
ডায়াবেটিস থাকলে করণীয়
মূল খাবার হিসেবে চিড়া, খই, ওটস নিজেদের কাছে রাখা প্রয়োজন। ফাইবারযুক্ত খাবার ডায়াবেটিক রোগীদের খাওয়া প্রয়োজন। ফাইবার প্রত্যেকের জন্যই খুব উপকারী। ডায়াবেটিক রোগীদের আঁশযুক্ত শর্করা খাওয়া প্রয়োজন। এতে পরিশ্রমের পাশাপাশি দীর্ঘ সময় ধরে দেহে শক্তি জোগান দেবে। হজ্জে খেজুর বা খুরমা খাওয়া যাবে। অতিরিক্ত ক্ষুধাতে ডায়াবেটিক পেশেন্টদের শরীর কাঁপতে পারে। প্রতি ৩ ঘন্টা অন্তর সেজন্য খাবার খাওয়া জরুরি। বিশেষ করে ৩ বার ভারী খাবার এবং ৩ বার হালকা খাবার গ্রহণ করলে ডায়াবেটিক রোগীদের কোনো সমস্যা হয় না। ডায়াবেটিক পেশেন্টদের বারে বারে প্রস্রাব হওয়ার প্রবণতা থাকে। অনেকে এ কারণে জমজমের পানি বেশি পান করা থেকে বিরত থাকেন। কারো এ ধরণের সমস্যা থাকলে গন্তব্য স্থানে পৌঁছানোর পর থেকে পানি পানের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে।
পরিবেশ আর খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের জন্য হজ্জে অনেকের কোষ্ঠকাঠিন্য, লুজমোশন, মাথা ব্যথা হতে দেখা যায়। ওখানকার খাদ্যাভ্যাসের সাথে নিজের নেয়া খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করলেই কোনো সমস্যা হয় না।
সুস্থ থেকে হজ্জ পালন করুন।
সৈয়দা শারমিন আক্তার
প্রধান পুষ্টিবিদ, ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টার
If you have any queries please contact us
Please fill out the below details if you wish to receive a confidential call from our client relations team.