আজকাল প্রায় ঘরে ঘরে কিশোরী থেকে তরুনিদের পিসিওএসের সমস্যা দেখা যাচ্ছে। এ সমস্যায় বেশিরভাগ দেখেছি- ওজন বেড়ে যাওয়া, পেট বড় হয়ে যাওয়া বা চর্বি জমে, অতিরিক্ত লোম গজানো, ঋতুস্রাবের সমস্যা নিয়ে আসছে। অনেকে বিষয়টি জটিলভাবেও দেখে থাকেন। অবিবাহিত হলে তাদের দ্রুত বিয়ে দেয়া হয়। শুধু তা-ই বাচ্চাও যেনো দ্রুত নিয়ে নেন- এ বিষয়গুলোও আসে। কেউ কেউ তো বলছেন, হয়তো ভবিষ্যতে মা হওয়ার সম্ভাবনাও কম।
প্রথমে জানা দরকার পিসিওএস আসলে কী?
পিসিওএস বা পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম একটি হরমোনজনিত সমস্যা। এখানে ডিম্বাশয়গুলিতে তরল (follicles) এর মতো ছোট ছোট কিছু উপাদানের বিকাশ হয়। এতে ডিম্বাশয় থেকে নিয়মিত ডিম ছাড়তে ব্যর্থ হয়। কখনো কখনো পুরুষ হরমোন অ্যান্ড্রোজেন বেড়েও যায়, ফলে দেহের বিভিন্ন স্থানে লোমের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।
এ অবস্থায় অনেকেই মনে করেন চিকিৎসা বুঝি কেবল মেডিসিনের মাধ্যমে অথবা ওজন কমানোর মাধ্যমেই করতে হয়। আসলে তা নয়। কারণ অনেক স্বাভাবিক ওজনেরও পিসিওএসের সমস্যা রয়েছে দেখা যায়। এ সমস্যার জন্য শুধু মেডিসিন নয় দেশীয় খাবার এবং নির্ধারিত কিছু এক্সারসাইজের মাধ্যমে খুব সহজেই প্রায় স্বাভাবিক অবস্থায় আনা সম্ভব।
আজ এক বয়ঃসন্ধিকালিন মেয়ের কথা বলবো, যে পিসিওএসের সমস্যা নিয়ে এসেছিলো। তার পিরিয়ড ইরেগুলার ছিলো, মুখে হেয়ার গ্রোথ ছিলো এমনকি ওজনও বেশি ছিলো। একেই তো বয়ঃসন্ধিকাল। বাড়ন্ত শরীর। সেজন্য আমাদের প্রথম কাজ হলো নিউট্রিশন ঠিক রেখে যাতে ওজন কমানো যায়, সেদিকে খেয়াল রাখা। এক্ষেত্রে তাকে অসম্পৃক্ত ফ্যাট, চর্বিছাড়া মাছ বা মাংস, ননিতোলা দুধ, বিভিন্ন বর্ণের শাকসবজির পরিমাণ বাড়িয়ে কার্বোহাইড্রেট কমিয়ে প্ল্যান করে দেয়া হলো। পাশাপাশি পিরিয়ড রেগুলার হওয়ার কিছু টিপস তাকে দেয়া হলো। শুধু তা-ই নয় ওভারীতে চাপ পড়ে এমন কিছু এক্সারসাইজ তাকে শিখিয়ে দেয়া হলো যেনো সে বাধ্যতামুলক তা অনুশীলন করে।
তার সঙ্গে কাউন্সেলিংয়ের সময় আমরা জানতে পেরেছি মেডিসিনের মাধ্যমে তার পিরিয়ড হতো। তাকে যেভাবে গাইড করা হলো, তাতে দেখা গেলো মাত্র ২ মাসের মধ্যেই দেশীয় খাবার ও এক্সারসাইজের মাধ্যমে পিরিয়ড রেগুলার হয়ে গেলো। এ ধরণের সমস্যায় পিরিয়ড রেগুলার হলে পেটের চর্বি অনেকখানি কমে আসে। পাশাপাশি এক্সারসাইজ ও খাদ্যাভ্যাসে ওজনও কমে যায়।
অনেকেই বলে থাকেন, পলিসিস্টিকে নাকি দুধ খাওয়া যায় না। এ কথাটাও ঠিক নয়। যে কোনো ডায়েটে প্রোবায়োটিকস হিসেবে কিছু রাখা প্রয়োজন। টকদই প্রোবায়োটিকস হিসেবে খুবই ভালো। তাছাড়াও আরো কিছু নির্দেশণা মেনে চলতে হবে- কোনোধরণের প্রসেসড খাবার, স্কোকড খাবার, সল্টেড বাদাম, ক্যানড সবজি, সস, চিপস এবং মেরিনেটেড খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এ সমস্যায় ডায়াবেটিসের ঝুঁকি থেকে রক্ষার জন্য উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার প্রাধান্য দিতে হবে। শর্করার চাহিদা পুরণে ডাল জাতিয় খাবার খাওয়া ভালো। রিফাইন্ড খাবার পুরোপুরি বর্জন করতে হবে। বেশি রাত না জেগে রাতের ঘুম পিসিও’র সমস্যায় খুব প্রয়োজন।
ইন্টারনেটে অনেক কিছুই থাকবে। কিন্তু অভিজ্ঞতার মূল্য অনেক। তা-ই শুধুমাত্র ইন্টারনেটের উপর নির্ভর না করে এ ধরণের সমস্যায় অভিজ্ঞ পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।
সৈয়দা শারমিন আক্তার
প্রিন্সিপাল নিউট্রিশনিস্ট
ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টার,
এপয়েনমেন্টের জন্য হেল্পলাইন: 01912013696
If you have any queries please contact us
Please fill out the below details if you wish to receive a confidential call from our client relations team.