শুধু দেশেই নয়, সারাবিশ্বেই অটিজম অনেক বেড়ে গেছে। WHOর মতে, বিশ্বের লোকসংখ্যার ১% অর্থাৎ ৭০ মিলিয়ন শিশু-কিশোর অটিস্টিক। জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই এর কারণ অনুসন্ধানে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, জন্মের সাথে সাথে বোঝাও যায় না শিশুর মধ্যে অটিজম আছে কিনা! শিশুর বয়স ৬ মাসের পর থেকে ৩৬ মাসের মধ্যে অটিজমের সম্পূর্ণ চিহ্ন বোঝা যায়। অটিজম শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশজনিত একটি সমস্যা। যা শিশুদের সামাজিক যোগাযোগ, আচরণ, কল্পনা বা চিন্তাশাক্তিতে প্রভাব ফেলে। একে অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার বলা হয়। দ্রুত সমস্যা চিহ্নিতকরণে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া যায়। আর দ্রুত পদক্ষেপে একেবারে স্বাভাবিকের মতোই দিন যাপন করতে পারে অটিস্টিক শিশু-কিশোর। যে কারণগুলো থাকতে পারে বলে ধারণা করা হয়, তা হচ্ছে-
১. ডিএনএ-র ত্রুটি- অটিজমে আক্রান্ত শিশুর ডিএনএ কপি সংখ্যার বৈচিত্র্য (সংক্ষেপে CNV) বিদ্যামান। এ অবস্থাটি এমন একটি পরিস্থিতিকে বোঝায় যেখানে ডিএনএর একটি নির্দিষ্ট অংশের কপির সংখ্যা ব্যক্তির জিনোমের মধ্যে পরিবর্তিত হয়। স্বতন্ত্র রূপগুলি সংখ্যায় কম বা বেশি হতে দেখা যায়।
২. প্রথম ৪ মাসের গর্ভাবস্থায় মায়ের আশেপাশের পরিবেশ ও খাওয়া-দাওয়ার প্রভাবে- পরিবেশের দুষিত পাদার্থ জিনের উপর কাজ করে স্নায়ু কোষ ধ্বংস করে। এই দুষিত বা বিষাক্ত পদার্থ শিশুর প্রাথমিক পর্যায়ে ও গর্ভে শিশুর মস্তিষ্ক বৃদ্ধির সময় মস্তিষ্কের কোষগুলো ধ্বংস করে। অটিজমের জন্য পারদ বা মারকারী, সীসা, পোকামাকড় মারার বিষ, খাদ্য সংরক্ষণের রাসায়নিক পদার্থ, খাবারে কৃত্রিম রংয়ের রাসায়নিক পদার্থগুলিকে দায়ী করা হয়।
৩. কিছু কিছু পরীক্ষায় মস্তিষ্কের কার্যকারিতার অসুবিধা লক্ষ্য করা গেছে। যেমন, মস্তিষ্কের বৈদ্যুতিক কার্যক্রমে অস্বাভাবিকতা, নিউরোকেমিক্যালে অসামঞ্জস্যতা, শিশুর যে কোনো ধরণের প্রি-নেটাল বা প্রসবোত্তর সংক্রমণ, মস্তিষ্কের গঠনগত ত্রুটি ইত্যাদি।
৪. গর্ভাবস্থায় ১ম ট্রাইমেস্টারে অতিরিক্ত ব্লিডিং হলেও শিশুর মধ্যে অটিজম থাকতে পারে বলে মনে করা হয়।
মায়ের রক্তে সেরোটনিন বেশি বা কম থাকলে গর্ভস্থ শিশুর অটিজম হতে পারে বলেও মনে করা হয়। কারণ সেরোটোনিন মানুষের মেজাজ, ঘুম, ক্ষুধা ও সামাজিকতার উপর কাজ করে। সেরোটনিন রক্তের প্লেটলেট এবং সিরামে অবস্থিত একটি যৌগ। যা রক্তনালীগুলিকে সংকুচিত করে এবং নিউরোট্রান্সমিটার হিসাবে কাজ করে। অর্থাৎ মস্তিষ্কের নিউরণের মধ্যে বার্তা পৌঁছায় এই সেরোটনিন। এমনকি সেরোটনিন খাদ্য হজমের সাথেও জড়িত। ডিপ্রেশনের চিকিৎসায় অনেকসময় সেরোটনিন দেয়া হয়। অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট হিসেবে সেরোটনিনের মাত্রা বাড়িয়ে চিকিৎসা করা হয়। গর্ভাবস্থায় মা এ ধরণের কোনো মেডিসিন খেলে অতিরিক্ত সেরোটনিনের জন্যে শিশুর রক্তে এর মাত্রা বৃদ্ধি পায়। যার জন্য শিশু হাইপারঅ্যাক্টিভও হতে পারে।
গর্ভাবস্থার প্রথম ৪ মাসে ভ্রুণ প্রতিমিনিটে ২,৫০,০০০ নিউরণ তৈরি করে। এ সময় ভ্রুণ বৃদ্ধির যে কোনো প্রতিবন্ধকতায় পরবর্তীতে শিশু অটিস্টিক হতে পারে। কিছু কিছু গবেষণায় বলা হচ্ছে, মায়ের দেহে ভিটামিন ডি কম থাকলে বিভিন্ন ধরণের জন্মগত ত্রুটি হতে পারে। তাছাড়াও গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, প্রিক্লাম্পশিয়া থাকলেও শিশুর মস্তিষ্কের গঠনগত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অটিজম প্রতিরোধে গর্ভাবস্থার সূচনা থেকে ডেলিভারী পর্যন্ত সচেতনতা প্রয়োজন।
সৈয়দা শারমিন আক্তার
প্রধান পুষ্টিবিদ, ফাউন্ডার
ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টার
If you have any queries please contact us
Please fill out the below details if you wish to receive a confidential call from our client relations team.