বর্তমানে বিশেষ করে শহরাঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিচ্ছে, রক্তে কার্বন ডাই অক্সাইড বেড়ে যাওয়া। মানব শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ফুসফুস। যা প্রকৃতি থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে সারাদেহে সরবরাহ করে। আবার শরীরের ক্ষতিকর বা বর্জ উপাদান কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ করে। কোন কারণে যদি ফুসফুস কার্বনডাই অক্সাইড সঠিক পরিমাণে নিঃসরণ করতে না পারে, তাহলে তা রক্তে থেকে যায়। এই অবস্থাকে বলা হয় হাইপারক্যাপনিয়া বা হাইপারকার্বিয়া।
স্বাভাবিক অবস্থায় আমাদের কোষ যখন শক্তি তৈরি করে তখন শরীর CO2 তৈরি করে। লোহিত রক্তকণিকা তখন বিভিন্ন অঙ্গ এবং টিস্যু থেকে কার্বনডাই অক্সাইড আমাদের ফুসফুসে নিয়ে যায়। শ্বাস নেয়ার সময় অক্সিজেন গ্রহনের পর প্রশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুস থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড বের হয়ে যায়। এই বর্জ্য উপাদান না বের হতে পারলে বা ফুসফুস যদি অপসারণ করতে না পারে তখন রক্তে কার্বন ডাই অক্সাইড জমে যায়।
লক্ষণ সমূহ
সাধারণ যেসব লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে- নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা, দুর্বলতা, মাথাব্যথা, বিষন্নতা, খিঁচুনি, মানসিক অবস্থার পরিবর্তন, অস্বস্থিভাব, স্নায়বিক দূর্বলতা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি। আরেকটি বিষয়ও হতে পারে, রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণও কমে যেতে পারে। হাইপারক্যাপনিয়া (রক্তে খুব বেশি কার্বন ডাই অক্সাইডের উপস্থিতি) আবার হাইপোক্সেমিয়া (রক্তে খুব কম অক্সিজেনের উপস্থিতি), একটি অন্যটির দিকে পরিচালিত করতে পারে। যার জন্য একই সময়ে হাইপারক্যাপনিক এবং হাইপোক্সেমিক দেখা দিতে পারে।
কারণ:
• দীর্ঘদিন লম্বা দম না নিলে- এটা অনেকটা ফুসফুসে অবস্থিত ছোট বায়ুথলির অক্ষমতার জন্য হতে পারে। অর্থাৎ যতটুকু বাতাস দেহে প্রবেশ করলো কিন্তু ফুসফুসে রক্ত প্রবাহ পর্যাপ্ত না থাকায় কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়। ফুসফুসে বাতাসে ভরে যায় কিন্তু রক্ত থেকে সমস্ত CO2 অপসারণ করতে পারে না।
• ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি) এবং স্লিপ অ্যাপনিয়া দুটি সাধারণ অবস্থা, যা কখনও কখনও হাইপারক্যাপনিয়ার দিকে এগিয়ে নিতে পারে।
• তাছাড়া রয়েছে শ্বাস-প্রশ্বাস সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা না থাকা। যেমন: স্ট্রোক, সেডেটিভ ওভারডোজ, স্থূলতা হাইপোভেন্টিলেশন সিন্ড্রোম এবং হাইপোথাইরয়েডিজম ইত্যাদি।
• মেরুদণ্ড, স্নায়ু বা পেশী নিয়ন্ত্রণ কম থাকলেও দেহে কার্বনডাই অক্সাইড বেড়ে যেতে পারে। যেমন মাল্টিপল সক্লেরোসিস (Multiple sclerosis), স্নায়ু বা মেরুদণ্ডের আঘাত, অ্যামিওট্রফিক ল্যাটারাল সক্লেরোসিস (ALS), পেশির দূর্বলতা ইত্যাদি। অ্যামিওট্রফিক ল্যাটারাল সক্লেরোসিস (Amyotrophic lateral sclerosis) একটি বিরল স্নায়বিক রোগ যা মোটর নিউরনকে প্রভাবিত করে। বিশেষ করে মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডের সেই স্নায়ু কোষগুলি, যা দিয়ে আমরা চিবাই, হাঁটাচলা করি এবং কথা বলে থাকি।
এছাড়াও আরো বিবিধ করণ রয়েছে যেখানে ফুসফুসের মাসলগুলো সঠিকভাবে সম্প্রসারিত হতে পারে না। যার জন্য আমাদের শ্বাসক্রিয়াও সঠিকভাবে পরিচালিত হয় না। কখনও কখনও, COPD আক্রান্ত কাউকে অক্সিজেন দিলেও হাইপারক্যাপনিয়া হতে পারে।
কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা হওয়ার আগে যদি প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেয়া হয় তাহলে মারাত্মক অবস্থা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। রক্তে যে কোনো বর্জ্য উপাদান বেড়ে গেলেই সমস্যা। সমস্যাগুলো এমন অবস্থানেও যেতে পারে যেখান থেকে রোগীতে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা প্রায় অসম্ভব। সেজন্য প্রয়োজন প্রথমে সমস্যা নিরুপণ। সমস্যা শনাক্তের জন্য-
• পালস অক্সিমেট্রির মাধ্যমে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ পরিমাপ করা।
• ধমনী রক্তের গ্যাস পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ জানতে হাতের কব্জি, বাহু বা কুঁচকি থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করতে হয়।
• সম্পূর্ন ব্লাড কাউন্ট, টক্সিকোলজি স্ক্রিন, CO2 রক্ত পরীক্ষা এবং থাইরয়েড ফাংশন পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
• ইমেজিং অর্থাৎ বুকের বা মাথার এক্স-রে বা সিটি স্ক্যান করা যেতে পারে।
• পালমোনারি ফাংশন পরীক্ষা। অর্থাৎ ফুসফুস কতটা ভাল কাজ করছে তা পরীক্ষা করে দেখা যায়।
• ইলেক্ট্রলাইট টেস্টেও কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ দেখা যায়।
দ্রুত চিকিৎসার আওতায় আনা খুবই জরুরি। পরিবারে অনেক আদরে লালিত সদস্যদের শুধুমাত্র শনাক্তকরণে বিলম্ব হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ICU তে স্থান পেতে হয় অনেককে। যেখানে পরিবারের সদস্যদের প্রবেশাধিকার নেই। এখানে চিকিৎসকদের ভূমিকাও অনেক। সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে সবাইকেই একদিন যেতে হবে। কিন্তু হাইপারক্যাপনিয়ার মতো সমস্যাগুলোর শুরুতেই সুচিকিৎসা নিশ্চিত করে, পরিবারের সদস্যদের মানসিক শান্তির ব্যবস্থা চিকিৎসকরাই করে দিতে পারেন।
সৈয়দা শারমিন আক্তার
প্রিন্সিপাল নিউট্রিশনিস্ট ও ফাউন্ডার
ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টার
If you have any queries please contact us
Please fill out the below details if you wish to receive a confidential call from our client relations team.