ওজন কমানোর উদ্দেশ্যে খাবার নির্বাচনে সুষম খাদ্য গ্রহণ খুব জরুরি। তাতে কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া ওজন কমানো সম্ভব। যেমন: কিছু খাবারে ওজন বাড়ে আবার কিছু কিছু খাবারে ওজন কমে। কারো যখন ওজন বেড়ে যায় তখন তার দেহের আয়তনের সাথে সাথে পাকস্থলীর আয়তনও বাড়ে। তাই বড় আয়তনের পাকস্থলীতে অল্প খাবার দিলে তা বিপরীত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ তার ক্ষুধার প্রবণতা থেকেই যাবে। ফলে যখন খাওয়া হবে তখন খাবারের পরিমাণটাও বেড়ে যায়। একটা পর্যায়ে কম খাওয়া আর অনুসরণ করতে পারবেন না। তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে দেহের ওজন যেভাবে বাড়ে, ওজন কমার সময় সেভাবে কমে না। সেজন্য খুব কম খাওয়া-দাওয়াতে সাধারণত চোখ বসে যাওয়া, গাল ভেঙে যাওয়া, গলার হাড় দেখা যাওয়া, ত্বকের মসৃনতা কমে যাওয়া উপসর্গগুলো দেখা দিতে পারে। তাই ওজন কমানোর জন্য না খেয়ে থাকা ঠিক নয়। তা না করে যতটুকু দেহের প্রয়োজনে খাদ্য দরকার ততটুকু গ্রহণ করতে হবে, এর বেশি নয়। অর্থাৎ কম ক্যালরিযুক্ত বেশি খাবার বিশেষ করে ১টি নির্দিষ্ট সময় পরপর সারাদিন কমপক্ষে ৬ বার গ্রহণের অভ্যাস গড়তে হবে।
সারাদিনের তুলনায় সকালের খাবারের পরিমাণ বেশি রাখুন। বেশির ভাগ মানুষেরই কর্মব্যস্ততার কারণে সকালের খাবারে খুব অনিয়ম হয়। স্কুলের শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাবার তাড়াহুড়ার কারণে না খেয়ে স্কুলে যায়। অফিসে যারা কাজ করেন তাদের বেশির ভাগই না খেয়ে কিংবা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম খাবার খেয়ে অফিসে যান। আর বাড়ির গৃহিণীরা সন্তান এবং গৃহকর্তার খাবার তৈরিতে এত ব্যস্ত থাকেন যে বেশিরভাগ সময়ে নিজেদের খাবারের কথা ভুলেই যান। এ সব কিছুর প্রভাব হিসেবে এসিডিটি একটা সাধারণ সমস্যা হিসেবে দেখা দেয়। এর সাথে সম্পর্কযুক্ত হচ্ছে ওজন বেড়ে যাওয়া কিংবা কমে যাওয়া, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস কিংবা হার্টের সমস্যা। বর্তমান লাইফস্টাইল বিবেচনা করলে দেখা যায় ঘরে বা বাইরে সব ক্ষেত্রেই সকালের পর থেকে দুপুর পর্যন্ত কাজের চাপ বেশি থাকে। আবার দুপুরের পর থেকে কিছুটা কমতে থাকে। যেহেতু সকালে খালি পেট থাকে, আবার সেভাবে প্রয়োজনীয় কাজগুলো শেষ করার পর খাবার গ্রহণ করে, তখন ইতোমধ্যে সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেছে। খালি পেটে সব কাজ করায় প্রচুর ক্ষুধা লেগে যায়। ফলে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবেই খাবার খাওয়ার পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। বিশেষ করে দুপুরের সময়ে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ কম কাজে লাগে এবং তা অতিরিক্ত মেদ হিসেবে দেহে জমা হতে থাকে ফলে তৈরি হয় স্থূলতা। কম বা বেশি যতটুকু খাবারই গ্রহণ করা হোক না কেন দেহে ওইসব খাবারের পরিশোষণ হওয়া প্রয়োজন। তাহলেই দেহ সুস্থ থাকবে। নিরোগ, অধিক কর্মক্ষম, দীর্ঘ সময় ধরে স্ট্যামিনা ধরে রাখার ক্ষমতা। নিজেকে সুস্থ রাখতে কাজের আগে বেশি খেলে কোনো সমস্যা হয় না। বর্তমান ব্যস্ততম জীবনযাত্রায় সকালে সারাদিনের তুলনায় পরিমাণে বেশি খাওয়া, দুপুরে সারাদিনের তুলনায় সবচেয়ে কম খাওয়া এবং রাতে মাঝামাঝি ধরনের খাবারে অভ্যস্থ হওয়া খুব জরুরি। তাছাড়া খেয়াল রাখতে হবে যেন রাতের খাবার গ্রহণ ঘুমানোর দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা আগে হয়, এবং রাতের খাবার গ্রহণের পর অবশ্যই শুয়ে বা বসে কাটানো যাবে না। সকালের নির্দিষ্ট পরিমাণ আহার গ্রহণ ও ২০ মিনিটের ব্যায়াম একজন মানুষকে সারাদিনে অন্তত ১৬ ঘণ্টা কর্মক্ষম রাখতে সক্ষম।
বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার অঞ্চলগুলোতে দুপুরে ভূঁরিভোজন অনেক দিনের একটি রীতি। সকালে কম খেয়ে যখনই আমরা দুপুরে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করি তখনই পাকস্থলির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। সেজন্য সারা দেহ কিছুটা নিস্তেজ হয়ে যায় এবং ক্লান্তি ভাব আসে। কাজের স্পৃহাও কমে যায় এবং বিশ্রাম নিতে ইচ্ছা করে। দুপুরের অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ ও ঘুম বা অতিরিক্ত সময়ের বিশ্রাম ওজনাধিক্যের অন্যতম কারণ। তাই সারাদিনের তুলনায় দুপুরের খাবার সবচেয়ে কম খাওয়া প্রয়োজন। কারণ দুপুরের পর কাজের পরিমাণ কমে আসে, ফলে ক্যালরি খরচও কম হয়। তাই অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ এবং এরপর পর্যাপ্ত ক্যালরি খরচ না হওয়ায় তা চর্বিতে রূপান্তরিত হয় এবং তাতে দেহের ওজনও বাড়িয়ে দেয়। তাই সারাদিনের আহারের মধ্যে দুপুরের খাবার অবশ্যই কম খাওয়া উচিত।
ডায়েট কন্ট্রোল করতে গিয়ে বেশির ভাগ লোকই রাতের খাবার বর্জন করেন অথবা শুধু সবজি খেয়ে থাকেন। দীর্ঘদিন এভাবে চলতে থাকলে এসিডিটি, বুক জ্বালা-পোড়া, লো-প্রেসার ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেবে। মনে রাখতে হবে সঠিক নিয়মে খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে এবং সঠিক উপায়ে ক্যালরি খরচ করতে পারলেই শরীরের ওজন ঠিক রাখা সম্ভব। রাতের বেলা খাদ্য গ্রহণ না করলে অনেকটা সময় দেহ খাদ্য থেকে বঞ্চিত হয় কিন্তু দেহের ভিতর বিপাক ক্রিয়া ঠিকই চলতে থাকে। ফলে দেহে সঞ্চিত পুষ্টি উপাদান খরচ হয়ে দৈহিক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় এবং দেহ দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই তিনবেলার প্রধান খাবার লাইলস্টাইলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করলেও দেহের ওজন কাক্সিক্ষত ওজনে রাখা সম্ভব। ঠিক তেমনি ওজনও কমানো সম্ভব।
ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিক অবস্থাতেও কিছুটা বেশি থাকে কারণ ইনসুলিনের ক্ষরণ কম থাকে। তাই যারা গ্লুকোজ যত বেশি পোড়াবে বা খরচ করবে তাদের তত দ্রুত রক্তে গ্লুকোজের স্বাভাবিক মাত্রা চলে আসে। সকালে যেসব ডায়াবেটিস রোগী ১ ঘণ্টা হাঁটেন কিন্তু তুলনামূলক সারাদিনে আর কোনো মুভমেন্ট না থাকে, তাদের ডায়াবেটিস সহজে নিয়ন্ত্রণে আসে না। তাই খাবার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সারাদিনই কম-বেশি মুভমেন্ট লাইফস্টাইলের সাথে মিল রেখেই করতে হবে। অর্থাৎ কাজের মধ্যে থেকেই ক্যালরি খরচ করতে হবে। এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে যে কোনো নিয়ন্ত্রণযোগ্য শারীরিক সমস্যাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
অপ্রিয় হলেও সত্য, চুল পাকা এবং চুল পড়ে যাওয়ায় আক্রান্ত ছোট-বড় বিভিন্ন বয়সী ছেলে-মেয়েসহ সকলের। তবে এই অবাঞ্চিত ঘটনার সাথে ফুড হ্যাবিটেরও নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। বেশিরভাগ মানুষ চুল পড়া রোধের জন্য ‘ই’ ক্যাপ খেয়ে থাকেন। এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। বরং ভিটামিনের ওভার ডোজ শরীরের জন্য ক্ষতিকর। নিজে নিজে ডায়েটিং না করে পুষ্টি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। চুল পড়া রোধে খাবারে আয়রন, অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি এসিড ও প্রোটিনের পরিমাণ বাড়াতে হবে। সপ্তাহে ৩ দিন সামুদ্রিক মাছ ও মিক্সড নাট খাবারের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। যারা ভেজিটেরিয়ান বা সবজিভোজী তারাও সঠিক নিয়মে খাবার গ্রহণে চুলপড়া কমাতে পারেন। তাদের খাবারে উন্নত প্রোটিনের জন্য বিভিন্ন ধরনের বাদাম, ছোলা, মটরশুঁটি, মটর ডাল ইত্যাদি যোগ করতে পারেন। খাবারের পাশাপাশি অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা এড়াতে হবে এবং রক্তস্বল্পতা থাকলে তার চিকিৎসা করাতে হবে। যে কোনো সমস্যাকে সমস্যা না ভেবে সমাধান খোঁজার চেষ্টা করুন।
ডায়েটিং করার ফলে ত্বক রুক্ষ হয়ে যাচ্ছে, চুল পড়ে যাচ্ছে এ ধরনের কথা অনেকেই বলে থাকেন। সঠিক নিয়মে ডায়েটিং না করলে এ সমস্যা হবেই। মনে রাখতে হবে দেহের প্রয়োজনে সব ধরনের খাদ্য উপাদানই পর্যাপ্ত পরিমাণে দরকার। এমন কিছু ডায়েটিং আছে যেখানে কম খাবার গ্রহণের মাধ্যমে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি দেহে ঘটিয়ে ফেলে। যার ফলে ত্বক রুক্ষ হবার সম্ভাবনা থাকে। যেমন চর্বি অবশ্যই খাওয়া যাবে তবে তা অসম্পৃক্ত চর্বি (মাছ-জলপাই-সূর্যমুখী-সয়াবিন তেল, বিভিন্ন জাতের বাদাম)। দিনে ৩-৪ বার কমপক্ষে ৫-৬ পরিবেশন, বিভিন্ন জাতের দেশি মৌসুমি ফলও খাবার অভ্যাস করতে হবে। প্রতিদিনের খাবারে ভিটামিন সি’ এবং ভিটামিন এ’র অন্তর্ভুক্তি যদি ডায়েটে থাকে তাহলে ত্বক রুক্ষ হবার সম্ভাবনা অনেক কম থাকে। সবচেয়ে বড় বিষয় ডায়েটের পাশাপাশি উপযুক্ত ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ কখনও ত্বকের ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলে না।
এখনকার শিশুদের মধ্যে ফাস্টফুড গ্রহণ যেন একটা ফ্যাশনের পর্যায়ে চলে এসেছে। বেশি দামের ফাস্টফুডের নাম বা ফাস্টফুডের দোকানের নাম বলাই যেন আভিজাত্যের প্রকাশ। এগুলো বড় ভুল। বর্তমানে অতিরিক্ত ফাস্টফুড গ্রহণের ফলে চাইল্ড ওবেসিটি বেড়েছে অনেক গুণ। কারণ টেস্ট বাড়ানোর জন্য ফাস্টফুডে যে বিভিন্ন ধরনের লবণের ব্যবহার করা হয় সেগুলো পরপর ৩ দিনও যদি কোনো শিশু খায় তাহলে শিশুদের মধ্যে এক ধরনের আসক্তির জন্ম দেয়। যে কোনো আসক্তিই ক্ষতিকর। আর তা যদি ফাস্টফুড হয় তাহলে তো কথাই নেই। কারণ এসব সম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড, লবণ, বিভিন্ন ধরনের টেস্ট তৈরির উপাদানে পুষ্টিগুণ অনেক কম। ফলে এ ধরনের খাবারে আসক্তি বাড়ালেও অন্যান্য খাবারের রুচি কমিয়ে দেয়। ফলে শিশু দুধ, ডিম, শাকসবজির মতো পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে চায় না। ফলে তাদের মধ্যে অপুষ্টি সমস্যা দেখা দেয়। তাই শিশুদের যদি ছোটবেলা থেকেই ঘরে তৈরি খাবারে অভ্যস্ত করানো যায় এবং ফাস্টফুডের অপকারিতা বোঝানো যায় তাহলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। প্রতিনিয়ত ফাস্টফুডের অভ্যাস কখনই গ্রহণযোগ্য নয়।
ফাস্টফুডের উপর ভিত্তি করে শিশু-কিশোরদের মধ্যে জরিপের ফলাফল
সম্প্রতি দেশে প্রথম শিশু-কিশোরদের উপর ফাস্টফুডের প্রভাবÑ এমন জরিপ চালানো হয়। জাতীয় জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সহায়তায় আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) সাতটি সিটি করপোরেশনে এই জরিপ করেছে।
জরিপে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, রংপুর ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২০৭টি ওয়ার্ডের ৫-১৮ বছর বয়সী ৪১০০ শিশু এবং তাদের মায়েদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। জরিপটি হয় ১ মে, ২০১৩ পর্যন্ত। শিশুশহরাঞ্চলে ১০ শতাংশ শিশু অতিরিক্ত ওজনের শিকার এবং ৪ শতাংশ শিশু স্থুলতায় ভুগছে। ঢাকা মহানগরে তা যথাক্রমে ১৪ শতাংশ ও ৭ শতাংশ। ঢাকাতেই এই হার সবচেয়ে বেশি। সবচেয়ে কম রংপুরে, সেখানে অতিরিক্ত ওজন ও স্থূল শিশু যথাক্রমে ৬ শতাংশ ও ১ শতাংশ। অতিরিক্ত ওজন ও স্থূল শিশুদের ৭০ শতাংশের বয়স ৫ থেকে ১২ বছরের মধ্যে। বাকি ৩০ শতাংশের বয়স ১৩ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। তবে অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতা ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে সমান। শিক্ষিত পরিবারে অতিরিক্ত ওজন ও স্থুল শিশুর সংখ্যাই বেশি। এই সমস্যা মা-বাবা দশম শ্রেণির বেশি পড়াশোনা করেছেন এমন পরিবারের চেয়ে পঞ্চম শ্রেণির কম পড়াশোনা করা পরিবারে কম।
জরিপের প্রাপ্ত ফলাফল থেকে নিম্নের স্বাস্থ্যগত সমস্য প্রকাশ পায়:
শহরাঞ্চল:
ঢাকা মহানগরে ২১% শিশু-কিশোর স্থুল এবং এদের শারীরিক সক্রিয়তা কম। উচ্চ আয়ের ২০% পরিবারের ৪৪% শিশুই স্থুল। নিম্ন আয়ের ২০% পরিবারের ৪% স্থুল।
কারণ:
খেলাধুলা: শিশুরা দিনে বা সপ্তাহে ফুটবল বা ভলিবল খেলার মতো শারীরিক পরিশ্রম কম করে। ৭০% শিশুর স্কুলে বা বাড়ির আশপাশে খেলার মাঠে যায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৯৪% শিশুর শারীরিক প্রশিক্ষণের ক্লাস আছে। কিন্তু তাতে অংশ নেয় ৬২% শিশু।
খাদ্যাভ্যাস: জরিপের অন্তর্ভুক্ত অর্ধেকের বেশি শিশু সপ্তাহে তিন থেকে চারবার সিঙ্গাড়া, সমুচা, চপ, বেগুনি, পেঁয়াজু জাতীয় তেলে ভাজা স্ন্যাকস খায়। ২০% শিশু সপ্তাহে গড়ে একবার পিৎজা,বারগার, ফ্রাইডচিকেন বা এ ধরনের ফাস্টফুড খায়।
গ্রামাঞ্চল:
উল্লেখিত জরিপে গ্রামের কোন তথ্য উল্লেখ না থাকলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরিপে দেখা গেছে গ্রামে শিশু-কিশোরদের মধ্যে ৩% স্থূলতার শিকার।
স্থূলতায় স্বাস্থ্যগত সমস্যা: অনেকেরই কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন। হৃদরোগ ও উচ্চরক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ছে, স্ট্রোকের মতো ঘটনাও ঘটছে। এমনকি হেপাটাইটিস ও বাত হচ্ছে।
প্রতিরোধ এবং প্রতিকারের উপায়: স্থূলতা প্রতিরোধে লাইফস্টাইলের সাথে ফুড হ্যাবিটের সামঞ্জস্যতাই একমাত্র পথ। অতিরিক্ত সময় ধরে টিভি কিংবা ভিডিও গেইমস না খেলা। শিশু-কিশোরদের খোলা মাঠে খেলতে উৎসাহিত করা। আশেপাশের পার্কগুলোতে হাঁটার অভ্যাস করা। তাছাড়া শিশু জন্মের ১ ঘণ্টার মধ্যে শালদুধ দেয়া এবং পূর্ণ ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়ানোতে উৎসাহিত করা। বাড়তি খাবার দেবার সময় ঘরে তৈরি খাবারে অভ্যস্ত করানো। স্কুলের টিফিন-ঘরে তৈরি টিফিন স্বাস্থ্যসম্মত। তেল, চর্বি ও অতিরিক্ত মাংস ও কার্বোহাইড্রেটযুক্ত (ফাস্টফুড) খাবার থেকে শিশুদের দূরে রাখা।
আজকাল মায়েদের একটি সাধারণ মন্তব্য শিশুদের না খাওয়া বা খেতে না চাওয়ার বিষয়টি। ইদানীং খুব কম শিশুকে দেখা যায় যারা নিজের ইচ্ছায় খেতে চায়। বিশেষ করে শিশুকালে শিশুকে খাওয়ানোর ব্যাপারে মাকে অনেক বেশি ধৈর্যশীল হতে হবে। অবশ্যই জোর করে কখনো শিশুকে খাওয়ানো উচিত নয়। এতে তার খাবারের প্রতি অনিহা তৈরি হয়। শিশুকে ২-৩ ঘণ্টা সময় ধরে খাওয়ানো ঠিক নয়। ক্ষুধা লাগলে সাধারণত শিশু কান্না করে। ঠিক তখনই বুঝতে হবে শিশুর ক্ষুধা পেয়েছে বা ক্ষুধা অনুভব করছে। তাৎক্ষণিক তাকে খাবার দেয়া উচিত। একই জাতীয় খাবার বারবার খেতে চায় না। এক্ষেত্রে খাবারে বৈচিত্র্য আনতে হবে। খাবার যতটুকু সম্ভব আকর্ষণীয় করে শিশুর সামনে উপস্থাপন করতে হবে। কখনই টিভি দেখতে দেখতে কিংবা গেইম খেলতে খেলতে খাওয়ানো ঠিক নয়। তবে শিশুকে ছড়া বলে, গল্প বলে, ছবি এঁকে কালারফুল ছবির বই পড়িয়ে খাওয়ানো যেতে পারে। পরিবারে সবার সাথে বসিয়ে শিশুকে খাওয়াতে হবে। সবার মতো শিশুটির জন্যেও আলাদা প্লেট-গ্লাস দিতে হবে, এতে শিশুরা আনন্দিত হয়। তাতে সবার সঙ্গে তার খাওয়াটাও সে উপভোগ করে।
বেশির ভাগ চাকরিজীবীকেই ডেস্কওয়ার্ক করতে হয়। বিশেষ করে বিভিন্ন ব্যাংক, কর্পোরেট অফিস, কাউন্সেলিং সেন্টার, কল সেন্টারগুলোতে ৭-৮ ঘণ্টা চেয়ার-টেবিলে বসে কাজ করতে হয়। চেয়ারে বসার ক্ষেত্রে যদি একটু নিয়ম মেনে বসা হয় তাহলে পেট বাড়ার সম্ভাবনা থাকে না। চেয়ারে বসার সময় পেট এবং পিঠ সোজা করে বসতে হবে। কখনোই পিঠ বাকা করে বা ঝুঁকে বসা যাবে না। দম নেয়ার ক্ষেত্রে লক্ষ রাখতে হবে তা যেন পেট পর্যন্ত না যায়। বুক পর্যন্ত নিতে হবে। সবসময় বসা বা দাঁড়ানো কিংবা হাঁটার সময় পেট ভেতরের দিকে চেপে রাখতে হবে। মাঝে মাঝে চেয়ারের দু’পাশে নিচে হাত নামিয়ে দেয়া যেতে পারে। এমন কিছু করলে দীর্ঘক্ষণ চেয়ারের বসে থাকলেও পেট বাড়বে না। অর্থাৎ বসে মুভমেন্ট বাড়াতে হবে।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় উচ্চরক্তচাপ আছে এমন রোগী অথবা উচ্চরক্তচাপসহ হৃদরোগীরা সকালে স্ট্রোক করে। কারণ ঘুম থেকে উঠার সময় দেহের ব্লাড সার্কুলেশন অনেক দ্রুত হয়। তাই সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। ঘুম থেকে উঠে বিছানা থেকে তাড়াহুড়া করে না উঠে কিছুক্ষণ অর্থাৎ কমপক্ষে ১০ সে. বসতে হবে। তারপর দুই পা একসাথে মাটিতে ফেলতে হবে। এরপর ধীরে ধীরে দু’পা একসাথে করে দাঁড়িয়ে তারপর পদক্ষেপ ফেলতে হবে। কখনোই উচ্চরক্তচাপ ও হৃদরোগীদের ঘুম থেকে উঠানোর জন্য হঠাৎ জোরে ডাকা বা ধাক্কা দেয়া উচিত নয়। যে কোনো ধরনের দুশ্চিন্তা থেকে সব সময়ই দূরে থাকতে হবে। এক্ষেত্রে ঘড়ির কাটা গোনা প্র্যাকটিস করবেন। অর্থাৎ দেয়ালঘড়িতে সেকেন্ডের কাঁটা ঘুরে ঘুরে কীভাবে এক মিনিট হলো সেটা শুধুমাত্র চোখে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। ঘুম যাতে ঠিকমতো হয় সেদিকে বিশেষ যতœবান হতে হবে। সেজন্য প্রতিদিন ঘুমানোর আগে শ্ববাসন করতে হবে।
সাধারণত আমাদের দেশে ছেলেদের ১৮ এবং মেয়েদের ১৫ বছর পর্যন্ত উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। উচ্চতা বৃদ্ধি অনেকটা বংশানুক্রমিক। তবে এর সাথে পুষ্টি এবং খাদ্যের সাথেও সম্পর্ক রয়েছে। যেসব শিশু জন্মের পর পর্যাপ্ত প্রোটিন যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করতে পারে তাদের শারীরিক গঠন এবং উচ্চতা বৃদ্ধি ভালো হয়। তাছাড়া সাঁতার, সাইক্লিং উচ্চতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে ডিমের সাদা অংশ, দুধ, কর্ন, আটা, ভুট্টা, সামুদ্রিক মাছ, ছোট মাছ, মাশরুম, কলিজা, ডাল, কলা, ব্রোকলি, পনির, দধি, পপকর্ন, শিম ও শিমের বিচি, কাঠালের বিচি, বিট, সয়াদুধ, সয়াপ্রোটিন বিস্কুট, পেয়ারা, নুডুলস, পাসতা, দেশি ফল, নদীর মাছ, দেশি মুরগি, লালশাক, তরমুজ, লাউ, মিষ্টি কুমড়া ইত্যাদি বিশেষ সহায়তা করে।
কাজের সাথে সংগতি রেখে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন খুব জরুরি।