প্রতিদিন স্বাভাবিক খাবার খেয়েও মাত্র ৩ মাসে একি পরিবর্তন!

দেহের অতিরিক্ত ওজন, ব্যাক পেইন, শোল্ডার পেইন, ডাবলচিন সব কিছু নিয়ে বিষিয়ে উঠেছিলাম। মানুষের কটুক্তিতে ক্রমশই বিষন্নতায় ডুবে যাচ্ছিলাম। সংসারের সম্পূর্ণ দায়িত্ব আমার। আমার একটি মেয়েও আছে। সংসার সামাল দিয়ে নিজেকে যে কিভাবে পরিবর্তন করব ভেবেই পাচ্ছিলাম না। আমি তো মডেল নই। তাই তেমন কোন রাতারাতি পরিবর্তনও চাচ্ছিলাম না। আমি আমার অতিরিক্ত ওজনের কথা বলছি। আমি দেখলাম ওজন যখন বাড়তে থাকে ঝামেলাও যেন বাড়তে থাকে। ওজন যখন কম ছিল তখন এ ধরনের কোন সমস্যা ছিল না। কটুক্তির একটা পযার্য়ে মনে হলো নিজেকে পরিবর্তনের চেষ্টা করে দেখি না। দেখতে থাকলাম ফেইসবুক। ঘাটতে থাকলাম ইন্টারনেট। পেয়েও গেলাম কিছু সমাধান। অল্প সময়ে ওজন কমানোর ক্রাশ প্রোগ্রাম। চিন্তা করলাম মাত্রতো ৭—১০ দিন। ক্রাশ প্রোগ্রাম শেষ করার পর কিছু ওজন কমেছে বলে খুশীও হলাম। কিন্তু পরবর্তীতে দেখলাম দেহে বিভিন্ন রকমের সমস্যা শুরু হয়েছে। অসম্ভব দুর্বল লাগতে লাগল। প্রেশার উঠানামা করছে, মাথা ঘোরে, চুল পড়ে যাচ্ছে। আবার ওজন যেখানে ছিল তার চেয়েও বেড়ে গেল। ডিপ্রেশন যেন এখন পুরোপুরি জেঁকে বসেছে। কোথাও যেতে ভাল লাগে না। আমি এক সময়ে ফ্যাশন সচেতন ছিলাম। কোন পোশাক পরেই স¦াচ্ছন্দ্য লাগছিলো না। নেগিটিভ বিষয়গুলো প্রাধান্য পাচ্ছে। এমন সময় একদিন আমার ছোট ভাইয়ের কাছে ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টার এর কথা জানতে পারলাম। মনে মনে ভাবলাম কত কিছুই তো করলাম। দেখি না শেষ চেষ্টা করে।

আমি ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টারে যখন এলাম তখন আমার ওজন ছিল ৮৮ কেজি, কোমর ভয়ংকর রকমের চওড়া ৪৫ ইঞ্চি। ফেইস এর কথা বলে কি হবে। যেন দুটো ফেইস মিলে একটি হয়েছে। ডাবলচিনের এমন খারাপ অবস্থা ফেইসের আকার কিছুই বুঝা যায় না, যেন একটা চাঁদের মতো গোল। উনারা যখন আমার সাথে কাউন্সেলিং করছিলেন আমাকে খুব ভাল করে দেখলেন। উনারা ক্যালকুলেট করে দেখলেন আমার দেহের শতকরা চর্বির পরিমাণ ৫৭% যেটা গ্রহণযোগ্য ৩১% পর্যন্ত। উনারা আমাকে আশস্ত করলেন আমি যেহেতু একাই রান্নাবান্না করি বাড়তি কোন ঝামেলা ছাড়া ঘরে তৈরি খাবার থেকেই কিভাবে নিজের জন্য খাবার বেছে নেয়া যায় সেভাবে দিবেন। খাবারের সাথে ফ্রি—হ্যান্ড ব্যায়াম দিলেন। এই ব্যায়াম করতে আলাদা কোন সময় বের করতে হয়নি। সারাদিন আমি যেভাবে আছি তার ভিতরে কিছু মুভমেন্ট করতে হবে। আমি একটু অবাক হচ্ছিলাম, এটা কিভাবে সম্ভব! খাবারের তালিকায় আবার আমার পছন্দের কিছু খাবারও রয়েছে। জিজ্ঞেস করলাম এতে কি আসলেই ওজন কমবে? ওনারা বললেন শুধু অভ্যাসটা তৈরি করুন।

আমি আর একটা বিষয়ে আশ্চর্য হয়েছিলাম উনারা শুধু ডায়েট চার্ট দেন না, উনারা দেন সারাদিনের একটা প্ল্যান। দিনের শুরু থেকে রাতের শেষ পর্যন্ত। যখন ফলো করা শুরু করি দেখলাম উনাদের কথাই ঠিক। সংসার করেও বাড়তি কোন ঝামেলা ছাড়াই আমি আমার অভ্যাস পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছি। আমার শুধু দেহেই না স্বাভাবেও আমূল পরিবর্তন এসেছে। আগে মেয়েকে স্কুলে দেয়ার পর আমি ঘুমাতাম। আমি এখন আর এসময় ঘুমাই না, বরং আমার কাজ করতেই ভাল লাগে। খাবারের অভ্যাসেও পরিবর্তন এসেছে। আগে আমি রেস্টুরেন্টে গিয়ে বেশি করে বাটার চিজ দিয়ে সব খাবার খেতাম। এখন আমি রেস্টুরেন্টে যাই ঠিকই কিন্তু বাটার চিজ এড়িয়ে চলি। বর্তমানে আমি ৭৩ কেজিতে অবস্থান করছি। আমার কোমর কমে এখন ৩৬ ইঞ্চি। ফলো আপে যখন আসি অনেক আগের পছন্দের জামাগুলো পরে আসতে পারি। আমি খুবই খুশি। কারণ আমার ওজন কমার সাথে সাথে ব্যাকপেইন, শোল্ডার পেইনও নেই। এবারের জন্মদিনে এক আত্নীয় আমার আগের একটি ছবি পাঠিয়ে আমাকে শুভেচ্ছা জানালেন। সেই ছবির সাথে আমার বর্তমানের ছবি মিলিয়ে তো আমি অবাক। মাত্র ৩ মাসে আমার একি পরিবর্তন!!! ওজনই শুধু কমেনি সাথে ডাবলচিন একদমই নেই। অবশেষে আমি আনন্দিত ও অনুপ্রাণিত হয়ে আমি আমার মেয়ে এবং স্বামীকেও সেখানে নিয়ে গেছি। আমি নিজে এখনো নিয়মিত ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টারে যাচ্ছি আমার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য। আমি জানি আমি পারব।