নারী স্বাস্থ্য, পুরুষদের তুলনায় অনেকটা পৃথক। 'বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা‘ স্বাস্থ্যকে সম্পূর্ণ শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক সুস্থতার একটি রাষ্ট্র হিসেবে বর্ণনা করেছে। নারী স্বাস্থ্যকে কেবল রোগ বা অসুস্থতার অভাব বলা হয়নি। নারীর স্বাস্থ্য হিসেবে মহিলাদের প্রজনন স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে নারী স্বাস্থ্যে ঝুঁকি, অভিজ্ঞতা এবং সুবিধাবঞ্চিত সবই আছে। নারী স্বাস্থ্য কেবল জীববিজ্ঞানের দ্বারা নয়, দারিদ্র-কর্মসংস্থান এবং পারিবারিক দায়বদ্ধতার মতো পরিস্থিতিতেও প্রভাবিত হয়। আমাদের মতো দেশগুলোতে স্বাস্থ্যসেবার অসুবিধার মাত্রা যত বেশি, ততবেশি এর ক্ষতিকর প্রভাবগুলোও দেখা যায়।
পুরুষদের স্বাস্থ্যের তুলনায় মহিলাদের প্রজনন ও যৌন স্বাস্থ্যের আলাদা পার্থক্য রয়েছে। গর্ভাবস্থা ও প্রসবকালীনে প্রতি বছর ১ মিলিয়ন মাতৃমৃত্যু যথেষ্ট ঝুঁকির মধ্যে থাকে। উন্নয়নশীল আর উন্নত দেশগুলির মধ্যে নারী স্বাস্থ্যসেবার পার্থক্যের কারণে মৃত্যুর হারে ব্যবধান রয়েছে। নারী মৃত্যুর মধ্যে যেসব অপ্রজননজনিত রোগ রয়েছে। যেমন কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজের চেয়ে প্রিএক্ল্যাম্পসিয়াসহ গর্ভাবস্থায় মৃত্যু বেশি। যৌন সংক্রমণে নারী ও শিশুদের মারাত্মক পরিণতি হতে পারে। নবজাতকের মৃত্যু, বন্ধ্যাত্ব, জন্মনিয়ন্ত্রণ, অপরিকল্পিত গর্ভাবস্থা এমনকি গর্ভপাতের মতো অবস্থাগুলোতেও নারী স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও সেবা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিনিয়ত নারী স্বাস্থ্য সুরক্ষায় চেক আপের গুরুত্বও অনেক। নারীদের বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে। যেগুলোর সাধারণ লক্ষণ হিসেবে শ্বাসকষ্ট, যোনি থেকে রক্তপাত হওয়া, অপরিকল্পিত যোনিস্রাব, ক্লান্তি, ওজন হ্রাস পাওয়া, চুলকানী, প্রস্রাবের নালী ফুটো, পা ফোলা ও ব্যথা হওয়া ইত্যাদি হতে পারে। স্বাস্থ্য চেকআপের সুবিধা থাকলে পরবর্তী ধাপে বিপদের সম্ভাবনা কম থাকে।
প্রাকৃতিকভাবেই নারী ও পুরুষ অসম শক্তি সম্পন্ন। ছোটোকাল থেকে আমাদের মতো দেশগুলোতে নারী শিক্ষা, নারী স্বাস্থ্য ও পুষ্টিতে কিছুটা বৈষম্য রয়েছে। এসব কারণে অপুষ্টি নারী জীবনের জন্মলগ্ন থেকেই ওতোপ্রতভাবে জড়িত। নারীর মধ্যে ঋতুচক্র, জন্মনিয়ন্ত্রণ, গর্ভাবস্থা ও মেনোপজ পর্যায়গুলো থাকায় স্বাস্থ্যগত দিক ভিন্ন হয়ে থাকে। শুধু তা-ই নয় নারী বা মহিলাদের মাধ্যমে অনেক রোগও ছড়াতে পারে। একজন থেকে অন্যজনের সংক্রমণের সাবধানতার জন্য হলেও ৩ মাস পর, ৬ মাস পর বা কিছু কিছু ক্ষেত্রে ১ বছর অন্তর নারী স্বাস্থ্য চেকআপ জরুরি।
কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, ক্যান্সার এবং ফুসফুসের রোগের শীর্ষস্থানীয় মৃত্যুর কারণগুলোতে মহিলাদের এবং পুরুষদের মধ্যে একই রকম থাকলেও নারীদের অভিজ্ঞতা বিভিন্ন। মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার, কোলোরেক্টাল, ডিম্বাশয় ও জরায়ুর ক্যান্সার রয়েছে। ধূমপান ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রধান কারণ। অধূমপায়ী মহিলাদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি পুরুষদের প্রায় ৩ গুণ। বর্তমানে উন্নতদেশগুলোতে নারীদের স্তন ক্যান্সার সাধারণ দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতা হিসেবে ধরা হয়। উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও অনেকটা একইরকম। নারী বা মহিলাদের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে রয়েছে কাডিওভাসকুলার ডিজিজ, হতাশা, ডিমেনশিয়া, অস্টিওপোরোসিস এবং রক্তাল্পতা। যদিও স্তন ক্যান্সার ও অস্টিওপোরোসিসকে মহিলাদের মধ্যে স্বাভাবিক ধরা হয়। তবে তা পুরুষদের মধ্যেও রয়েছে। হার্ট ডিজিজ পুরুষ-মহিলা উভয়ের জন্যই উদ্বেগের কারণ। কেবল প্রতিরোধের পদ্ধতিগুলো ভিন্ন। বার্ধক্যে যত্ন নেয়া, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা ও ত্বকের যত্ন সম্পর্কে মহিলাদের আলাদা যত্নের প্রয়োজন রয়েছে।
স্বাস্থ্যগত দিক থেকে একজন নারী নিরোগ থাকতে গেলে প্রতি বছর সুস্থতার জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার প্রয়োজন। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নারীদের জন্য প্রিমিয়ার হেলথ কেয়ার বা বার্ষিক স্বাস্থ্যসেবা ধরণের কিছু স্কীম থাকা জরুরি। বিশ্বের বহুদেশে প্রিমিয়ার কেয়ার ফর উইমেন চালু করে কার্যকরী ফল পেয়েছে। এসব কার্যক্রমে স্ত্রীরোগ, সাধারণ সুস্থতায় করণীয়, পরিবার পরিকল্পনায় কার্যকরী পদক্ষেপ, প্রাক মাসিক থেরাপি, যৌনরোগ সম্পর্কে ধারণা ও সংক্রমণ থেকে রক্ষার উপায়, কোলনোস্কোপি ইত্যাদি অন্তর্ভূক্ত।
সামাজিক দ্বায়বদ্ধতা থেকে নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা সর্বাগ্রে প্রয়োজন। এ সচেতনতা শুরু করতে হবে পরিবার থেকেই।
©Syeda Sharmin Akter
Principle Nutritionist, Diet Counseling Centre
If you have any queries please contact us
Please fill out the below details if you wish to receive a confidential call from our client relations team.